নিজস্ব প্রতিবেদক: কার্যকর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাপনা দেশে ব্যবসা-সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের অন্যতম পূর্বশর্ত বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।
গতকাল রোববার ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আরবিট্রেশন আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার’ শীর্ষক অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সামীর সাত্তার বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধির ধারা আরও বেগবান করার পাশাপাশি বাণিজ্য-সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে আমাদের একটি কার্যকর আইনি কাঠামো প্রয়োজন, যা বিশেষ করে ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দ্রুত ও দক্ষ কন্ট্রাক্ট এনফোর্সমেন্ট বাস্তবায়ন সক্ষম। আমাদের বর্তমান আইনি কাঠামোয় এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রথম ধাপেই বিদ্যমান বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তি আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, গত কয়েক দশকে আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বাণিজ্য বিরোধের পরিমাণ, ফলে সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে আরবিট্রেশন একটি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সামীর সাত্তার বলেন, ক্রস-বর্ডার-সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য বিরোধগুলো দ্রুত ও স্বল্প খরচে সমাধানে প্রচলিত আইনি ব্যবস্থার চেয়ে আরবিট্রেশন ব্যবস্থাকেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেশি মাত্রায় কার্যকর বলে মনে করেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে আইনি কার্যক্রম সম্পন্ন করে বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়। তিনি জানান, বর্তমান সরকার দেশে ব্যবসা-সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারে বদ্ধপরিকর এবং বতর্মান প্রেক্ষাপটে ‘আরবিট্রেশন আইন, ২০০১’ সংস্কারের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
ব্যবসায়ীদের আরও বেশি হারে এডিআর কার্যক্রম ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, কার্যকর এডিআর ব্যবস্থাপনা বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মেডিয়েন কনভেনশন স্বাক্ষরিত হবে এবং সিপিসি অ্যাক্ট এরই মধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্নে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদি। তিনি বলেন, আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনালের কোর্টের মতো ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। ‘আরবিট্রেশন অ্যাক্ট, ২০০১’-এর সংজ্ঞায় ‘কোর্ট’কে ইন্টারন্যাশনাল কমার্শিয়াল আরবিট্রেশনের আদলে যেন হাইকোর্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি তিনি স্ট্যাম্পের শুল্ক দেয়ার সব প্রক্রিয়া ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় আনার প্রস্তাব করেন এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে আরবিট্রেশন মামলার কার্যক্রমের একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরির প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচনায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ-এর সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আকতার, গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী প্রমোদ নায়ার অংশ নেন।
জাভেদ আকতার ডিজিটাল ম্যাকানিজম ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি স্মার্ট আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া চালুকরণের ওপর জোরারোপ করেন, সেইসঙ্গে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মাঝে আরবিট্রেশন-বিষয়ক সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন।
ইয়াসির আজমান বলেন, ‘আরবিট্রেশন অ্যাক্ট, ২০০১’ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ, তবে এটার প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি। পাশাপাশি তিনি এ আইনের দ্রুত বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রয়োগের প্রস্তাব করেন।
সেমিনারে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী।