বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ পাঠাবে না ম্যারিকো

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের তিন ধাপে ঘোষিত লভ্যাংশ কোম্পানির বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ডলার সংকটের কারণে তারা বিতরণ করতে পারছে না। তাই ডলার সংকট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ম্যারিকো বাংলাদেশকে বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশের টাকা ওয়ার্কিং ক্যপিটাল হিসেবে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর আগে বিষয়টি জানিয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন জানায় ম্যারিকো। তার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনুমোদন দিয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে কমিশন।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ম্যারিকো ২০২১-২২ হিসাববছরের ২২৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার চূড়ান্ত লভ্যাংশ এবং ২০২২-২৩ হিসাব বছরে ১ম ও ২য় অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করে, যা ডলার সংকটের কারণে বিতরণ করা যাচ্ছে না বলে কমিশনকে কোম্পানিটি জানায়। তাই কমিশন ম্যারিকো বাংলাদেশকে বিদেশি শেয়ারহোল্ডার, ভারত ম্যারিকো লিমিটেডসহ বাকিদের লভ্যাংশের টাকাকে কোম্পানির ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এজন্য কোম্পানিকে লভ্যাংশের ব্যাংক হিসাব থেকে অন্য একটি কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর করার জন্য বলা হয়েছে এবং সে বিষয়ে পরে বিএসইসির কাছে তথ্য হালনাগাদ দিতে বলেছে কমিশন।

এ বিষয়ে জানতে কোম্পানির সচিব ইলিয়াস আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য শেয়ার বিজ থেকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলে সেটা দেখোর পরও কোনো উত্তর দেননি।

উল্লেখ্য, বাজারের অস্থিরতা কমাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তবুও ডলার সংকট কমছে না। পাশাপাশি রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমায় দিন দিন রিজার্ভে চাপ বাড়ছে। বর্তমানে জ্বালানি তেল, সারসহ অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ডলার দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার পাচ্ছে না।

এদিকে ডলারের উচ্চ দাম ও সংকটের কারণে চাপে পড়েছেন মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীরা। ডলারের খরচ বাড়ায় অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার পরিধি কমিয়ে ফেলছেন। আবার চাইলে অনেকে চাহিদামতো আমদানি ঋণপত্রও খুলতে পারছেন না। ঋণপত্র খুলতে না পেরে সংকটে পড়েছেন তারা।

জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম চার মাস (জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর) রিজার্ভ থেকে ৫০০ কোটি (পাঁচ বিলিয়ন) ডলারের বেশি বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে দিন দিন রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। গত সপ্তাহের বুধবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। অথচ গত বছর একই সময়ে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। দেশের ইতিহাসে গত বছরের আগস্ট মাসে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।

এদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বা রিজার্ভের বড় দুই উৎস রপ্তানি ও প্রবাসী আয় টানা দুই মাস ধরে কমছে। এতে ডলার সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে, তা গত আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে রপ্তানি আয় গত বছর একই মাসের তুলনায় কমেছে প্রায় আট শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরেও কমেছে রপ্তানি আয়। এর আগে টানা ১৩ মাস রপ্তানি আয় বেড়েছিল।

এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর ডিএসইর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়, চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন, ২০২২) জন্য ঘোষিত দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ বিইএফটিএন সিস্টেমসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছে ম্যারিকো বাংলাদেশ। প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীদের জন্য দ্বিতীয়বার ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছিল কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। এর আগে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের জন্য প্রথমবার ৪৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ম্যারিকো বাংলাদেশ।

এদিকে সর্বশেষ ৩১ মার্চ সমাপ্ত ২০২২ সালের সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য ২০০ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশের বাইরে ৬০০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। সে হিসেবে কোম্পানিটি মোট ৮০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। সর্বশেষ হিসাববছরে ম্যারিকো বাংলাদেশের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১১২ দশমিক ৮২ টাকা। আগের হিসাববছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৯৮ দশমিক ৬৯ টাকা।

প্রসঙ্গত, ম্যারিকো বাংলাদেশ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৯ সালে। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ারসংখ্যা তিন কোটি ১৫ লাখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০