বিদেশের সঙ্গে লেনদেন আর্থিক হিসাবে ঘাটতি আরও বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশি বিনিয়োগে মন্দা, নতুন ঋণ কমে যাওয়া এবং আগের ঋণ পরিশোধের চাপে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি আরও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ১৩৭ কোটি ডলার। তবে একই সময়ে আমদানি ব্যয় কমে আসা ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণে বিদেশের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। সেই সঙ্গে প্রবাসী আয়ে ভর করে চলতি হিসাবেও উদ্বৃত্তাবস্থা বজায় রয়েছে। এর প্রভাবে সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, কড়াকড়িসহ নানা পদক্ষেপে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে ২০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ সময়ে বাংলাদেশের আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫৭২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে একই সময়ে আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৩ হাজার ২৫৩ কোটি ডলার। অন্যদিকে প্রথম ৫ মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছিল ২ হাজার ৭১ কোটি ডলার। এতে বিদেশের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ১৮২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। যদিও শুধু নভেম্বর মাসে নতুন করে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ১০৩ কোটি ডলার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ে ব্যবধার কমার সঙ্গে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে প্রথম ৫ মাসে চলতি হিসাবে ৫৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত বজায় রয়েছে। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাবে রেকর্ড প্রায় ৫৬৭ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল।

সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। তবে ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।

আর্থিক হিসাবে ঘাটতি আরও বেড়েছে: চলতি হিসাবে উদ্বৃত্তাবস্থা বজায় থাকলেও আর্থিক হিসাবে ঘাটতি কমছেই না। উল্টো নভেম্বর মাসে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ১৩৭ কোটি ডলার। সবমিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে আর্থিক হিসাবে ৫৩৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত এই ঘাটতির পরিমাণ ৪০২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। তবে গত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে এ হিসাবে ১২৬ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বৃদ্ধির পেছনে বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ কমে যাওয়া ও  আগের ঋণ পরিশোধের চাপ বৃদ্ধিকে দায়ী করা হচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম ৫ মাসে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমেছে ২০ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ সময়ে আগের নেয়া ঋণ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ সময়ে বৈদেশিক ঋণ সহায়তাও কমেছে। গত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে যেখানে ১৬৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ঋণ সহায়তা এসেছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরে একই সময়ে এসেছে ১০৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ সময়ে নিট এফডিআই কমেছে ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ বেড়েছে। নিট পোর্টফোলিও বিনিয়োগও ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে, এর পরিমাণ ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি সামান্য কমেছে: আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি বজায় থাকায় প্রথম ৫ মাসে সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৮৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৮২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর গত অর্থবছরে একই সময়ে এই হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি বাড়লেও পাঁচ মাসের হিসাবে কমে এসেছে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০