‘বরাবরই ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে: বৈধ বিনিয়োগ ছাড়াই সিঙ্গাপুরে শীর্ষ ধনী সামিটের আজিজ খান’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা রাষ্ট্রের সহায়তায় দস্যুতার দৃষ্টান্ত কি না; সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বাংলাদেশ সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি ছাড়াই সিঙ্গাপুর ও ভারতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন আজিজ খান অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামিটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না; এটি সাধারণ মানুষ তথা দেশবাসীকে হতাশ করবে।
জানা গেছে, দেশের বাইরে সিঙ্গাপুর বা ভারতে সামিট গ্রুপের বৈধ কোনো বিনিয়োগ নেই। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা আজিজ খান। আবাসন ও অবকাঠামো খাতে ব্যবসা আছে সামিট গ্রুপের। সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) অধীনে সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ ব্যবসার পাশাপাশি ভাসমান স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) এবং এলএনজি টার্মিনালসহ সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি রয়েছে। ভারতে রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দর ব্যবসা। বিজনেস সাময়িকী ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় গত বছর টানা ষষ্ঠবারের মতো নাম ওঠে মুহাম্মদ আজিজ খানের। তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় এক দশমিক ১২ বিলিয়ন বা ১১২ কোটি ডলার।
দেশ থেকে অর্থ পাচার ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৯ সালে এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) প্রতিবেদন বলেছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এটি চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়েও বেশি। প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ পাচারে শীর্ষ ৩০ দেশের একটি বাংলাদেশ।
আমাদের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা বিদেশে শীর্ষ ধনী, এটি নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই বরং এটি লজ্জার। কেননা, পাচার করা অর্থে বিদেশে ফুলেফেপে উঠছে তাদের ব্যবসা। বিদেশের ক্যাসিনোতে টাকা উড়ানোর খবরও এসেছে গণমাধ্যমে জানা গেছে। যারা বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়-অপব্যবহার করে, ঋণ পরিশোধ না করে কিংবা উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় না করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছেন, তারা রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। আমরা শুধু হিসাব করছি, পাচার হওয়া অর্থ দিয়েই কতটা পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত কিন্তু কাজের কাজ কিছু করছি না। প্রভাব-প্রতিপত্তি বিবেচনা করে কোনোভাবেই অর্থ পাচারকারীদের ছাড় দেয়া উচিত নয়। রাষ্ট্র এমন প্রভাবশালীদের ছাড় দেবে অন্য দিকে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আনয়নে বিধিনিষেধ জারি করবে; এটি সামাজিক ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রের বৈষম্যবিরোধী অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই খুব কম সময়ের মধ্যে আজিজ খানসহ বিদেশে বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠানো কিংবা শীর্ষ ধনীর তকমা পাওয়া ব্যক্তিদের সম্পদের অনুসন্ধান করা উচিত।