নিজস্ব প্রতিবেদক: টাকা পাচারের বেশকিছু অভিযোগের ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানাডায় খবর নিয়েছি, প্রাথমিকভাবে কিছু সত্যতা পেয়েছি। মনে করেছিলাম রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে, কিন্তু দেখা গেল রাজনীতিবিদ চারজন। সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। এছাড়া কিছু ব্যবসায়ীও আছে। কিন্তু বিদেশে যদি কেউ বৈধভাবে টাকা নেয়, তাহলে কোনো আপত্তি নেই। তবে অবৈধভাবে পাচার করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল বেলা ২টায় রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে একথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। তারা বলে ফিরিয়ে নেবে, কিন্তু বাস্তবে নেয় না। পৃথিবীর বড় দেশগুলো যদি চাপ দিত, তাহলে হয়তো ফিরিয়ে নিত। মিয়ানমারের কোনো দায়িত্ববোধ নেই। রাশিয়া ও চীন মূলত এ বিষয়টি নিয়ে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি চায় না। তারা বলে, এটা তোমরা নিজেরা মিলে সমাধান করে নাও। তবে আমরা আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
‘রোহিঙ্গাদের সিকিউরিটির জন্যই ভাসানচরে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু আন্তর্জাতিক এনজিও বাধা দিচ্ছে। তাদের প্ররোচনা দিচ্ছে, তোমরা সেখানে যেও না। কিন্তু রোহিঙ্গারা যেখানে থাকে, সেখানে যদি ভূমিধস হয়, সেই দায়িত্ব কে নেবে। পরে বিদেশিরা বলবে, বাংলাদেশ সরকার কিছুই করেনি। তবে আমরা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যেতে অটুট রয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনি এখনও পালিয়ে আছে। দুজন খুনির অবস্থান জানি। একজন আমেরিকায় রয়েছে, আরেকজন কানাডায়। এরই মধ্যে আমরা কানাডায় আইনজীবী নিয়োগ করেছি। এখনও সুরাহা হয়নি। আমেরিকায় অবস্থানরত খুনিকে ফেরাতে আশা পেয়েছি। তাদের অ্যাটর্নি জেনারেলকে সব তথ্য পাঠিয়েছি, তারা একটা সিদ্ধান্ত দেবে।
পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি আট বাংলাদেশিকে ফেরত আনতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি নাÑজানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। তাদের দেশে আনতে টাকাও পাঠিয়েছি। তারা ওমান থেকে পাকিস্তানে ঢোকে। তিন মাস জেলও দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। সেটা শেষ হয়েছে। পাকিস্তানে সরাসরি ফ্লাইট নেই, এখন তারা ওমানে যাবে। তারপর ওমান থেকে ফ্লাইটে দেশে আসবে।
কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কতজন প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সময়ে এক লাখ ৬০ হাজার প্রবাসী দেশে এসেছেন। অধিকাংশ এসেছেন সৌদি থেকে। কভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর সৌদি চাপ দিল, লোক নিয়ে যাও। সৌদি প্রথমে পাঠাল, যারা জেলে ছিল; যারা ক্রিমিনাল তাদেরও পাঠাল। তবে সংখ্যা খুব কম।
‘প্রবাসীদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭০০ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে, যাতে প্রবাসীরা দেশে ব্যবসা করে। এছাড়া আমরা দেশ থেকে ৭০ কোটি টাকা নগদ দিয়েছি বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের।’
বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আগামী ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেখানে আলোচনা হবে। পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমাধান হবে বলে আশাবাদী।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রচুর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশে সেটা অনেক কম। ধর্ষণও আমাদের দেশে প্রতি ১০ লাখে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। কিন্তু ওপেন সেক্সের দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকায় সেটা আরও বেশি।
তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ ভারত। তাদের সঙ্গে একটা সলিড রিলেশন। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ’৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নতি হলে কিছু শত্রুও বাড়বে। সেজন্য আমরা কাজও করছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী।