শেয়ার বিজ ডেস্ক: চলতি বছর এ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার এক লাখের বেশি কর্মী কাজের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অন্যান্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে বিদেশে পাড়ি দেয়ার হার। খবর: ডেইলি মিরর।
শ্রীলঙ্কার অ্যাসোসিয়েশন অব লাইসেন্সড ফরেন এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিসের (এএলএফইএ) বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম ডেইলি মিরর জানায়, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে এক লাখের বেশি কর্মীর।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর শ্রীলঙ্কার অভিবাসী শ্রমিকদের বেশ চাহিদা রয়েছে এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদেশে পাড়ি দেয়া কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানায় এএলএফইএ।
সামগ্রিকভাবে গত বছর দেশটি থেকে বিদেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান এক লাখ ২১ হাজার ৭৯৫ কর্মী, ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার ৭১১ জন। এ হিসাবে আলোচিত সময় রেকর্ড ১২৬ দশমিক আট শতাংশ বেড়েছে অভিবাসী কর্মী। এই কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন নানা শ্রেণির পেশাজীবী। মিড লেভেলের দাপ্তরিক এবং এ ধরনের কর্মী, দক্ষ ও আধা দক্ষ কর্মীর সংখ্যা বেশি। অদক্ষ ও গৃহকর্মী বা গৃহশ্রমিকের বহিরাগমন তুলনামূলক কম হয়েছে গত বছর। এ সময় গৃহকর্মীর বিদেশে যাওয়ার হার ২৪ দশমিক এক শতাংশ কমেছে। তবে এ সময় নারী গৃহকর্মীর অভিবাসন দ্বিগুণ হয়েছে।
ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড রিপোর্ট (এফবিআর) অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্য কমেছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে থাকায় অনেক নারী কর্মী বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন, অনেকে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে তাদের সঠিক তথ্য নেই শ্রীলঙ্কান ব্যুরো অব ফরেন এমপ্লয়মেন্টের (এসএলবিএফই) কাছে। হালনাগাদ তথ্য নেই বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের কাছেও। কেননা দেশটির সংকটময় পরিস্থিতিতে অনেক কর্মী তথ্য হালনাগাদ করার তাগিদ অনুভব করছেন না।
চলতি বছর মধ্যপ্রাচ্যের কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতে তুলনামূলক বেশি কর্মী গেছেন। মোট অভিবাসী শ্রমিকের ৮৪ দশমিক আট শতাংশ এ দেশগুলোর।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দশকে শ্রীলঙ্কার অভিবাসী কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে। এই অভিবাসীদের অনেকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ভিনদেশে গেছেন, যাদের বেশিরভাগ দক্ষ কর্মী। কাজের জন্য দেশ ছাড়েন দক্ষ, আধা দক্ষ ও কম দক্ষ কর্মী, যাদের দেশ ছাড়ার মূল কারণ অর্থনৈতিক। এই কর্মীরা নির্দিষ্ট সময় পর দেশে ফিরে আসেন। রাজনৈতিক কারণে দেশত্যাগ করেন যেসব নাগরিক তারা মূলত অন্যদেশে উদ্ধাস্তু হন, কিংবা রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। শিক্ষার জন্যও অনেক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী দেশটি থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমান।
এদিকে সিলন চেম্বার অব কমার্স (সিসিসি) গতকাল সতর্ক করে জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা না হলে দেশটি আরও গভীর সংকটে পড়বে। সম্প্রতি টেম্পল ট্রিজ ও গ্যালে ফেসের কাছে সংঘর্ষের পর উদ্বেগ জানায় সিসিসি। প্রায় মাসব্যাপী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পর চলতি সপ্তাহে সহিংস হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সিসিসি তাই সরকার, সশস্ত্র বাহিনী ও জনসাধারণকে ধৈর্যশীল হওয়ার আহŸান জানায়। গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, উদ্ভ‚ত পরিস্থিতির কারণ নির্ণয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে দক্ষিণ এশিয়ার একসময়কার সমৃদ্ধিশালী দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। এ কারণে দেশটির বর্তমান সরকার নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে এবং সমস্যা সমাধানে আন্দোলন চলছে দেশটিতে।