সোনালী ব্যাংক

বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আসার আগেই বিতরণ

জয়নাল আবেদিন: রেমিট্যান্সের টাকা হাতে পাওয়ার আগেই মোটা অঙ্কের টাকা গ্রাহকের হাতে তুলে দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। দীর্ঘ ২০ বছরেও সেই টাকা দেশে আনা সম্ভব হয়নি। বিদেশি চারটি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে কাভার ফান্ড না পেয়ে রেমিট্যান্সের অর্থ বেনিফিশিয়ারিদের পরিশোধ করায় বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে। দ্রুত পর্ষদে উপস্থাপন করে বিষয়টি সমাধানের নির্দেশও দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই দুর্ঘটনার ফলে ৪৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে সোনালী ব্যাংকের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকা হাতে না পেয়ে গ্রাহককে পরিশোধ করার কোনো নিয়ম নেই। এক্ষেত্রে গ্রাহক ও ব্যাংকারের মধ্যে অবৈধ লেনদেন সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে টাকা আসার কথা ছিল, সেগুলো হলোÑকুয়েতের আল মুসা এক্সচেঞ্জ, ন্যাশনাল মানি এক্সচেঞ্জ ও কুয়েত ওভারসিজ এক্সচেঞ্জ এবং সৌদি আরবের আল রাজি কমার্শিয়াল এক্সচেঞ্জ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আল রাজি কমার্শিয়াল এক্সচেঞ্জের কাছে পাওনার বিপরীতে পরিশোধ করা ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অবলোপন করার পরিকল্পনা চলছে। এনআরএটি অ্যাকাউন্টের ওডি ব্যালেন্স ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অবলোপনের বিষয়ে আইনগত মতামত চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পুরো বিষয়টি পর্ষদে উপস্থাপন না করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা তলব করে তাদের জবাবসহ পরবর্তী বোর্ড সভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহামান প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের মতামত নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।

পরে সোনালী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল ওয়াহাব শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এই ঘটনাটি অনেক পুরোনো। এটা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। তবে আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, যখন এই ঘটনাটা ঘটে তখন রেমিট্যান্স-সংশ্লিষ্ট সবকিছু পোস্ট অফিসের মাধ্যমে করতে হতো। সে সময় ডিজিটাল ব্যবস্থা ছিল না। প্রবাসীরা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে রেমিট্যান্সের অর্থ পাঠাত। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে সেই ড্রাফট আসত পোস্ট অফিসের মাধ্যমে। তখন আমরা এই টাকা প্রবাসী গ্রাহকের আত্মীয়-স্বজনদের পৌঁছে দিতাম। রেমিট্যান্স বিতরণের ক্ষেত্রে সব ব্যাংকেই একই নিয়ম ছিল। প্রক্রিয়াটা ছিল দীর্ঘমেয়াদি।’

যদিও বিদেশ থেকে টাকা আসার আগেই কেন বিতরণ করা হয়েছে এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে লোকসানের খাতায় চলে যাওয়া এসব টাকা অবলোপন করার পরিকল্পনাও চলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাটি ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সালের। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিষয়টির সমাধান হয়নি। টাকাগুলো আদায় করতে হলে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হতে পারে। আর সেজন্য যে পরিমাণ টাকা খরচ হবে, সেই অঙ্ক খোয়া যাওয়া টাকার চেয়ে বেশি। সে কারণেই বিষয়টি এখনও ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।

ব্যাংকিং সেক্টরে এ ধরনের অনিয়মের বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ থেকে অর্থ আসার পর গ্রাহকের পরিচয় যাচায়-বাছাই করে টাকা পরিশোধ করতে হয়। টাকা আসার আগে পরিশোধের কোনো প্রশ্নই আসে না। আমার জানামতে, বিদেশ থেকে টাকা আসার পরও ব্যাংকগুলো তা দিতে গড়িমসি করে। কিন্তু এই টাকাগুলো আসল গ্রাহকের কাছে গেছে কি না, সে বিষয়ে শক্তিশালী তদন্ত হওয়া উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকে যখন আমরা কাজ করতাম তখন সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রেমিট্যান্সের টাকা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা ছিল। আমরা বেশিরভাগ সমেয়ই ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু বিদেশ থেকে টাকা পাওয়ার আগে গ্রাহককে বুঝিয়ে দেওয়ার উদাহারণ পুরো ব্যাংকিং ইতিহাসে আমি একটাও দেখিনি।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন প্রাবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার=৮৫ টাকা) আট লাখ ৫২ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০