Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 4:22 am

বিদেশ প্রত্যাগতদের পুনর্বাসনে ৭০০ কোটি টাকার তহবিল

শেয়ার বিজ ডেস্ক : বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের পুনর্বাসনে ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন এবং তাদের পুনঃপ্রশিক্ষণের মাধ্যমে আবারও বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের পুনর্বাসন এবং প্রবাসে কর্মরতদের নিরাপদ অভিবাসনসহ তাদের সার্বিক কল্যাণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সূত্র: বাসস।

মন্ত্রণালয় গৃহীত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বিপদগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জরুরি খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য প্রদান, কভিড-১৯-এ মৃত প্রত্যেক প্রবাসী বাংলাদেশির পরিবারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিন লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান; করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিদেশফেরত কর্মীদের কোয়ারেন্টাইন পালন শেষে নগদ পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা; বিদেশ প্রত্যাগত অভিজ্ঞ কর্মীদের যথাযথ স্বীকৃতি ও সনদায়নের উদ্যোগ; বিদেশফেরত অসহায়, ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্র কর্মী এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীর পরিবারের সদস্যদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ দেশে চলমান সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় মানবিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় কভিড-১৯-এ ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরত কর্মীদের চার শতাংশ সরল সুদে বিনিয়োগ ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এজন্য ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী কর্মীদের পুনর্বাসনে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের বিষয়ে গত ১২ জুলাই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সঙ্গে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলেন, বিদেশফেরত কর্মীরা অভিজ্ঞতার বিবেচনায় দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমরা প্রবাসী কর্মীদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। তাদের সামগ্রিক সুরক্ষায় সরকারের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।’

এদিকে গত ১ এপ্রিল থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বের ২৬টি দেশ থেকে ৭৮ হাজার ৪৩ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে ৭৩ হাজার ৩১১ পুরুষ এবং চার হাজার ৭৩২ নারী রয়েছেন।

দেশে ফেরা কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ না থাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন ২৫ হাজার ৬৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী ২৪ হাজার ৫৫৩ জন, আর নারী কর্মী ফিরেছেন এক হাজার ১০০ জন।

সৌদি আরব থেকে ১৫ হাজার ৩৮৯ প্রবাসী কর্মী ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৭৯৬ জন, আর নারী কর্মী রয়েছেন এক হাজার ৫৯৩ জন। সৌদিফেরত কর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন।

করোনাভাইরাসের জন্য কাজ না থাকায় টুরিস্টনির্ভর দেশ মালদ্বীপ থেকে ফিরেছেন সাত হাজার ৯০৯ প্রবাসী কর্মী। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেছেন এক হাজার ৩৮২ জন। বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে ওমান থেকে দেশে ফিরেছেন তিন হাজার ৮৮৪ জন। ভিসার মেয়াদ না থাকায় কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন সাত হাজার ৩২৯ জন। বাহরাইন থেকে ফিরেছেন ৭৪৬ জন।

কাজ না থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে এসেছেন ৭১ প্রবাসী। কাতার থেকে ফিরেছেন ছয় হাজার ৬০১ জন। মালয়েশিয়া থেকে ফিরেছেন দুই হাজার ২২৬ জন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফিরেছেন ১০০ জন। কাজ না থাকায় থাইল্যান্ড থেকে ফিরেছেন ২০ জন, মিয়ানমার থেকে ৩৯ জন, জর্ডান থেকে ৪৮১ জন এবং ইরাক থেকে ফিরেছেন দুই হাজার ১৩৬ জন।

কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভিয়েতনাম থেকে ফিরেছেন ১২২ জন এবং শ্রীলঙ্কা থেকে ৮০ জন। অন্যদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ইতালি থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১৫১ প্রবাসী বাংলাদেশিকে। এই ১৫১ প্রবাসী গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে ইতালি গেলে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। পরে দেশে ফিরলে সবাইকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।

এছাড়া লেবানন থেকে ৯৭৬ জন, রাশিয়া থেকে ১০০ জন, মরিশাস থেকে ২০ জন, তুরস্ক থেকে এক হাজার ৯৪৮ জন, নেপাল থেকে ৫৫ জন, হংকং থেকে ১৬ জন, কম্বোডিয়া থেকে ৪০ জন ও জাপান থেকে আটজন প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন।