দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ নিয়ে একপ্রকার সিদ্ধান্তহীনতা লক্ষণীয়। কখনও নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে নতুন করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৭৭৯ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।
গত ৯ মার্চ দেয়া বিদ্যুৎ বিভাগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের তথ্য মতে, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। বিভিন্ন সময়ে বলা হচ্ছে, মোট ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্রই অলস পড়ে আছে। এরপরও সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনাও (পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান) মানা হচ্ছে না। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩১ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গিয়ে দাঁড়াবে ৩৭ হাজার মেগাওয়াট। এ সময় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকবে ২৯ হাজার মেগাওয়াট। মোট ক্ষমতার ২০ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রাখা যাবে না। বর্তমানে সেখানে অলস বসে আছে প্রায় ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র। আবার সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সক্ষমতা না থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট স্থাপিত ক্ষমতার একটি অংশ উৎপাদন করা যায় না। এতে সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকে না। এ পরিস্থিতিতে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন না দিতে বিদ্যুৎ বিভাগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল সুপারিশ করেছে।
গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদনের ‘১২ কোম্পানির ক্যাপাসিটি চার্জ ৪৭ হাজার ২৬২ কোটি টাকা’। এতে বলা হয়, উৎপাদনে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীলতা এক দশকে অনেকটাই বেড়েছে। এ সময় রেন্টাল-কুইক রেন্টাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বিদ্যুৎ খাত। উল্টো বড় আকারের ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারের (আইপিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে অনেকগুলো। এতে বিদ্যুৎ খাত গুটিকয়েক বড় করপোরেটের দখলে চলে গেছে। আর এক দশকে শীর্ষ ১২টি গ্রুপ/কোম্পানির পকেটে গেছে ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় ৬৮ শতাংশ।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পিডিবিকে প্রতি বছর বিপুল ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়। এটি দুঃখজনক। এ অবস্থায় আমাদের উচিত বিদ্যুতের চাহিদা ও পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা, অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ক্রমেই বন্ধ করা এবং মাস্টারপ্ল্যান জরুরিভাবে পর্যালোচনা করা। কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেবে, এটি প্রত্যাশিত নয়। কেন অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পিডিবি ক্যাপাসিটি চার্জ ক্রমেই বেড়ে যাবে!
বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাষ্ট্রের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ও হতাশাজনক। জনদুর্ভোগ কমাতে বিদ্যুৎ চুরির পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হবে। নতুন সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র, সঞ্চালন ও বিতরণ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। বৈদেশিক ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ব্যবহার ব্যবস্থাপনা উন্নত করে সাশ্রয়ী হতে হবে। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া দিতে হয়। অথচ এসব কেন্দ্রের পূর্ণ সক্ষমতা তো দূরে থাক, ৩০ শতাংশও চালানো সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়বে, ক্যাপাসিটি চার্জও বেড়ে যাবে। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।