বিদ্যুতের চাহিদা মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হোক

বিশ্বের সব দেশই বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। গুরুত্ব বিবেচনায় আমাদের সরকারও প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার কথাও শোনা যাচ্ছে কিছুদিন ধরে। ভারসাম্যহীন বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা সচেতন নাগরিকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

স্বীকার করতে হবে, এখন লোডশেডিং নেই বললেই চলে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিসিস (আইইইএফএ) বলেছে, বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সে কারণে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাত্র ৪৩ শতাংশ ব্যবহার করা হয়, বাকি ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া দেয়া হয়। এ কারণে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাড়ছে। তখন সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল, এত বিদ্যুতের দরকার নেই বলে বেশ কয়েকটি ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে পর্যায়ক্রমে।

বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুসারে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ অব্যাহত থাকলে ২০২৯-৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে প্রকৃত চাহিদার চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। তার কিছুটা এরই মধ্যে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। গতকাল শেয়ার বিজের খবরে বলা হয়, সর্বশেষ প্রতিবেদনে পিডিবি বলেছে, ‘সক্ষমতার ১৮ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট অলস থাকবে ২০২৭ সালে। এতে দেখা যায়, নতুন বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার পাশাপাশি ছয় বছরে বেসরকারি কয়েকটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাবে। ফলে ২০২৭ সাল শেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। যদিও সে সময় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াবে ২২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। ফলে চাহিদার সর্বোচ্চ ব্যবহার হলেও সে সময় ১৮ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকবে। উৎপাদন সক্ষমতার তা প্রায় ৪৫ শতাংশ।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে পর্যায়ক্রমে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে চাহিদার ১০ শতাংশ অধিক ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র রাখলেই চলে। সে অনুযায়ী বর্তমানে সর্বোচ্চ কত মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব, সেটিরও সঠিক মূল্যায়ন জরুরি। 

প্রায় ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে না থাকলেও বেসরকারি খাতের কেন্দ্রগুলোর জন্য মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে। এরপরও কেন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, আমাদের জানা নেই। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ই নয়, লোপাট হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। বিদ্যুৎ আর ১০টি পণ্যের মতো নয় যে, এটি সংরক্ষণ করে আপৎকালীন সময়ে ব্যবহার করা যায়। তাহলে কেন শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে? প্রয়োজনাতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় বা লোপাট বন্ধ করতে হবে। সক্ষমতা মূল্যায়নপূর্বক বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত, সেটা নিরূপণ করতে হবে। আশা করি, সরকার মহাপরিকল্পনা জরুরিভাবে পর্যালোচনা করবে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় রোধে বাস্তবানুগ ব্যবস্থা নেবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০