শেয়ার বিজ ডেস্ক : বিদ্যুতের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সাধারণ ভোক্তা ও শিল্প- এই দুই ধরনের গ্রাহকের জন্যই বিদ্যুতের দাম কমানো হবে, যা কার্যকর হবে আগামী মঙ্গলবার থেকে। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে দেশটির কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর: রয়টার্স।
সাধারণ ভোক্তাদের জন্য বিদ্যুতের দাম কমবে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে শিল্পের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের মূল্য কমানো হবে ৩৩ শতাংশ। দেশটির বিদ্যুৎ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। দরিদ্র ভোক্তাদের বিল থেকে ৭ ডলারের সমপরিমাণ ২ হাজার রুপি ছাড় দেয়া হবে। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৭ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যায়। এরপর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ২৯০ কোটি ডলার ঋণের জন্য চুক্তি করে। সেই চুক্তির শর্তের অংশ হিসেবে কলম্বো গত সেপ্টেম্বরে বিদ্যুতের দাম ৭৫ শতাংশ বাড়ায়। এরপর ফেব্রুয়ারিতে আবার বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানো হয়।
পাবলিক ইউটিলিটিজ কমিশন অব শ্রীলঙ্কার চেয়ারম্যান মনজুলা ফারনান্দো গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, তারা আশা করছেন যে বিদ্যুতের দাম কমানোর ফলে অর্থনীতি চাঙা হবে এবং সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবেন। শ্রীলঙ্কায় চলতি বছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম কমানোর ফলে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হতে পারে। দুই বছর ধরে দেশটির অর্থনীতিতে কোনো প্রবৃদ্ধি নেই। তবে চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ হতে পারে। কর বৃদ্ধি, রুপির দাম পড়ে যাওয়া ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ৭০ শতাংশে ওঠে যায়। তবে গত মার্চে বিদ্যুতের দাম প্রায় ২২ শতাংশ কমানো হয়, যা মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সহায়তা করে।
শ্রীলঙ্কা গত বছরের মার্চে আইএমএফের সঙ্গে চার বছর মেয়াদি ঋণ চুক্তি করে। এর আওতায় দেশটিকে কর বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি উঠিয়ে নেয়া এবং সরকারি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার শর্ত দেয় আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি। আইএমএফের ঋণ পেতে বিদ্যুতের দাম ২০২৩ সালে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটি। এর আগের বছরেও দেশটি বিদ্যুতের দাম ৭৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল। গত বছরের জানুয়ারিতে দেশটিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫৪ শতাংশের বেশি। আয়কর বেড়ে কারও কারও ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশেও পৌঁছায়। এরপর দেশটি আর্থিক বিভিন্ন নীতি কাঠামো সংস্কার করে এরই মধ্যে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করেছে। এর মধ্যেই বিদ্যুতের দাম কমানোর সুখবর দিল দেশটি। শ্রীলঙ্কা ধীরে ধীরে সংকট অনেকটা সামলে নিয়েছে। আগামী বছর দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন হবে। এর আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বিভিন্ন বন্ড হোল্ডারদের কাছ থেকে নেয়া ১৩ বিলিয়ন (১ হাজার ৩০০ কোটি) ডলারের ঋণ পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন।
গত মাসে বিদেশি ঋণ পরিশোধ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছায় দ্বীপরাষ্ট্রটি। দেশটি সব মিলিয়ে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন (৫৮০ কোটি) ডলারের বিদেশি ঋণ পুনর্গঠন করেছে। এর মধ্য দিয়ে খেলাপি থেকে দেশটি বেরিয়ে এলো। শ্রীলঙ্কার দ্বিপক্ষীয় বিদেশি ঋণের বড় উৎস হচ্ছে চীন। দেশটির অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া ৪ বিলিয়ন (৪০০ কোটি) ডলারের ঋণও পুনর্গঠন হওয়ার পথে, শিগগির এ বিষয়ে চুক্তি হবে।
প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কা ২০২২ সালে ঋণ সংকটে পড়ে। বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় কলম্বো খেলাপি হয়ে যায়। তখন চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যায় দেশটি। মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বী হয়। জ্বালানির সংকটে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দেখা দেয় খাদ্যসংকট। এমন এক পরিস্থিতিতে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পালিয়ে যান। দেশটির বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্টের বাসভবনেও হামলা চালায়।