ইসমাইল আলী: গণশুনানি ছাড়াই সরকারের নির্বাহী আদেশে গত বৃহস্পতিবার বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। যদিও গ্রাহক পর্যায়ে বর্ধিত দাম ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়। আগামী দুই মাসে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়তে পারে। তবে সর্বশেষ পাঁচ শতাংশ দাম বৃদ্ধির ফলে গ্রাহকদের ব্যয় বাড়বে প্রায় এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, দাম বাড়ানোর আগে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্যহার ছিল ৭ টাকা ১৩ পয়সা। বর্ধিত দাম কার্যকরের পর এ হার দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৪৯ পয়সা। অর্থাৎ দাম বেড়েছে প্রতি ইউনিটে গড়ে ৩৬ পয়সা। এর সঙ্গে চলতি বছরের (২০২৩ সাল) জন্য সম্ভাব্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ লোকসান বিশ্লেষণ করে শেয়ার বিজ বর্ধিত ব্যয়ের তথ্য তুলে এনেছে।
তথ্যমতে, চলতি মাসে বিদ্যুতের সম্ভাব্য উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩০১ কোটি কিলোওয়াটঘণ্টা। এর থেকে তিন শতাংশ সঞ্চালন ও গড়ে সাত দশমিক ৯৫ শতাংশ বিতরণ লোকসান বাদ দিয়ে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হবে ২৬৮ কোটি ৭৯ লাখ কিলোওয়াটঘণ্টা বিদ্যুৎ। ৩৬ পয়সা হিসেবে এজন্য গ্রাহকদের ব্যয় বাড়বে ৯৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের সম্ভাব্য উৎপাদন আরও কিছুটা কমিয়ে ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি কিলোওয়াটঘণ্টা। এর থেকে সঞ্চালন ও বিতরণ লোকসান বাদ দিয়ে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হবে ২৬৭ কোটি ৮৭ লাখ কিলোওয়াটঘণ্টা বিদ্যুৎ। ৩৬ পয়সা হিসেবে এজন্য গ্রাহকদের ব্যয় বাড়বে ৯৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
এভাবেই মার্চে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬৯ ইউনিট, এপ্রিলে ৫৪১ ইউনিট, মে মাসে ৪৬৩ ইউনিট ও জুনে ৫২৮ ইউনিট। এর থেকে সঞ্চালন ও বিতরণ লোকসান বাদ দিয়ে গ্রাহকদের কাছে চার মাসে বিক্রি করা হবে যথাক্রমে ৪১৮ দশমিক ৮৩ ইউনিট, ৪৮২ দশমিক ৩৪ ইউনিট, ৪১৩ দশমিক ৩০ ইউনিট ও ৪৭১ দশমিক ৩০ ইউনিট। এতে চার মাসে গ্রাহকদের ব্যয় বাড়বে যথাক্রমে ১৫০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, ১৭৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, ১৪৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ও ১৬৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
একইভাবে জুলাইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০৮ ইউনিট, আগস্টে ৫২৮, সেপ্টেম্বরে ৫১১, অক্টোবরে ৪৮১, নভেম্বরে ৩৪৪ ও ডিসেম্বরে ৩৪৯ ইউনিট। সঞ্চালন ও বিতরণ লোকসান বাদ দিয়ে গ্রাহকদের কাছে ওই ছয় মাসে বিক্রি করা হবে যথাক্রমে ৪৫৩ দশমিক ৮১ ইউনিট, ৪৭১ দশমিক ৩০, ৪৫৫ দশমিক ৬৫, ৪২৯ দশমিক ৮৭, ৩০৭ দশমিক ৪৫ ও ৩১২ দশমিক ০৫ ইউনিট।
এতে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে গ্রাহকদের ব্যয় বাড়বে যথাক্রমে ১৬৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ১৬৯ কোটি ৬৭ লাখ, ১৬৪ কোটি তিন লাখ, ১৫৪ কোটি ৭৫ লাখ, ১১০ কোটি ৬৮ লাখ ও ১১২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে গ্রাহকদের ব্যয় বাড়বে এক হাজার ৭১০ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
যদিও আগামী দুই মাসে বিদ্যুতের দাম আরও ১০ শতাংশ বাড়তে পারে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পাঁচ শতাংশ দাম বাড়ানোয় এখনই ব্যয় বৃদ্ধির হিসাব করে লাভ নেই। কারণ আগামী দুই মাসে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়তে পারে। এতে গ্রাহকদের ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।