বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি শূন্যে নামিয়ে আনতে চারটি বিকল্প প্রস্তাব বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আট টাকা ২৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারাই বলছেন, সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও কম ঝুঁকিপূর্ণ হলো প্রথম প্রস্তাবটি। কারণ প্রতি মাসে পাঁচ শতাংশ হারে বাল্ক মূল্যহার বাড়লে গ্রাহক পর্যায়ে চাপ কম পড়বে। তবে এটি বাস্তবায়ন করা জটিল। কারণ প্রতি মাসে মূল্যহার বাড়ালে গ্রাহকদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে।
গ্রাহকদের নেতিবাচক মানোভাবের বিষয় তখনই আসে, যখন অকারণে তাদের ওপর ভোগান্তি নেমে আসে। ভর্তুকি শূন্যে নামাতে কি দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই? সব দায় কেবলই গ্রাহকের? ভর্তুকি শূন্যে নামাতে দাম বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোন বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে?
একসময় পরিষেবা বিল কতটা ন্যায্যতার সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে, তা আগেই জানা যেত। গণশুনানি হতো, তাতে উভয় পক্ষ যুক্তি পেশ করত। এখন আর বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়াতে গ্রাহকের মত নেয়ার অপেক্ষায় থাকতে হয় না। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন সংশোধন করে নিজের কাছে এ ক্ষমতা নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম দ্রুত বাড়াতেই এটি করা হয়েছে বলে মনে করছেন জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা। ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর জারি করা রাষ্ট্রপতির ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’-এর ভাষ্য, আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ে জনস্বার্থে কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির (জ্বালানি) নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ ও ভোক্তাপর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।
আমরা বিশ্বাস করি, গণশুনানি না থাকলেও সরকার সব একতরফাভাবে জনগণের ওপর দায় চাপিয়ে দেবে না। যেসব বিষয়ের ওপর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নির্ভর করে, সেগুলোর প্রতিটি যাচাই-বাছাই করে দেখা প্রয়োজন। এক বছরেই ভর্তুকি শূন্যে নামিয়ে আনতে গেলে এবং সেটির অভিঘাত পুরোটাই গ্রাহকদের ওপর পড়লে গ্রাহক বড় বিপদে পড়বেন, যেখানে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। এ অবস্থায় বিদ্যুতের অত্যধিক মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কঠিন করে ফেলবে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর হয়তো অনেক যুক্তি আছে, কিন্তু মানুষের দুঃখ-কষ্টও বিবেচনায় নিতে হয় কল্যাণরাষ্ট্রকে। ক্যাপাসিটি চার্জ কমিয়ে এনে অলস বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিদ্যুৎ বিভাগে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালুর মাধ্যমে সরকার বিদ্যুতে ব্যয় ও ভর্র্তুকি কমিয়ে আনতে পারে। জনদুর্ভোগ বিবেচনায় রেখে সরকার যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে বলেই প্রত্যাশা।