নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্য ইউনিটপ্রতি প্রায় ১২ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। গতকাল বিদ্যুতের দাম নিয়ে শুরু হওয়া গণশুনানির প্রথম দিনে এ সুপারিশ করা হয়। যদিও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এ মূল্য ২২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে।
এদিকে আজ থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিনে পিডিবির গ্রাহক পর্যায়ের সরবরাহ করা বিদ্যুতের দাম নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
বাল্ক মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে বিউবোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ইউনিটপ্রতি পাঁচ টাকা ৭২ পয়সা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ ব্যয় ছিল পাঁচ টাকা ৫৯ পয়সা। এছাড়া চলতি অর্থবছর বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ছয় টাকা ২২ পয়সা। যদিও বর্তমানে প্রতি ইউনিট বাল্ক বিদ্যুৎ চার টাকা ৮৫ পয়সা দরে বিক্রি করছে। এতে বিউবোর ইউনিটপ্রতি লোকসান হচ্ছে ৮৭ পয়সা। সে কারণে ৮৭ পয়সা পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রয়োজন।
এদিকে পিডিবির প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে ইউনিটপ্রতি ৫৭ পয়সা বা ১১ দশমিক ৭৮ বাল্ক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করে বিইআরসির কারিগরি কমিটি। এক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হয় গত অর্থবছর কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ছিল পাঁচ টাকা ৬১ পয়সা। চলতি অর্থবছর তা কিছুটা কমে পাঁচ টাকা ৪১ পয়সা হবে। আর বর্তমানে বিদ্যুতের গড় বিক্রয়মূল্য চার টাকা ৮৪ পয়সা। ফলে ৫৭ পয়সা ঘাটতি রয়েছে, যা বাড়ানো দরকার।
উল্লেখ্য, পিডিবি চলতি বছরের ২০ ফেব্রæয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দামবৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেয় বিইআরসিতে। তখন গত অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ভিত্তিতে ৭২ পয়সা হারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। এরপর বেশ কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রকৃত ব্যয় বিবেচনা করে নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়। এজন্য ৮৭ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে।
পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্যুতে দামের ঘাটতি পূরণে ভর্তুকির কথা বলা হলেও তা না দিয়ে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এতে ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। আর এ সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এতে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঋণে বোঝা চেপেছে সংস্থাটির কাঁধে। এতে ১৩ হাজার কোটি টাকার ঋণাত্মক ইক্যুইটি জমে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণে পিডিবি সংকটে পড়েছে।
এদিকে সংকট কাটতে অবচয় তহবিল থেকে খরচ মেটাচ্ছে পিডিবি। অবচয় তহবিলে ২২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা জমা থাকার কথা। কিন্তু জমা আছে ৩১৯ কোটি টাকা। অর্থ সংকটের কারণে ওভারহোলিং রক্ষণাবেক্ষণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
যদিও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিপক্ষে দাম যুক্তি তুলে ধরেন ভোক্তাদের সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের ঘাটতিকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদানে বিইআরসি নির্দেশনা দিয়েছে। সেটা ধরা হলে ঋণের সুদ বাবদ ধার্যকৃত ২১ পয়সা ব্যয় কমবে। আর সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাজারমূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ করলে ২৩ পয়সা ব্যয় কমবে। এছাড়া মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ডিজেলের পরিবর্তে ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করলে আরও ৯ পয়সা উৎপাদন ব্যয় কমবে। অন্যান্য খাতে আরও ১৫ ব্যয় কমানো যায়। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৭৩ পয়সা কমানো সম্ভব। ফলে বাল্ক মূল্য বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।
উল্লেখ্য, গণশুনানি পরিচালনা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। এ সময় কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আজিজ খান, মিজানুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
Add Comment