দেশের উন্নয়নের প্রয়োজনে যেসব ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিদ্যুৎ খাত। এ খাতে বছরে ভর্তুকির পরিমাণ গড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যে কারণে বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মাত্রাতিরিক্ত চার্জ। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে নানা ধরনের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতাও রয়েছে। এখনও ১০ শতাংশের কাছাকাছি সিস্টেম লস রয়েছে। আর অভ্যন্তরীণ কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগও প্রবল। এছাড়া এ খাতের হিসাবায়ন প্রক্রিয়ায় এখনও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড স্থাপিত হয়নি। কাজেই বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য সার্বিক ব্যবস্থাপনাগত উৎকর্ষ সাধন করতে হবে।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘তিন বছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি এক লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা!’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, কয়েক বছরে ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে চলেছে। যদিও চাহিদা সে অনুপাতে না বাড়ায় প্রায় অর্ধেক সক্ষমতা বসেই থাকছে। এছাড়া কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে দ্রুত। ফলে বিদ্যুৎ বিক্রি করে বড় অঙ্কের লোকসান দিচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ ঘাটতি পূরণে পিডিবিকে নিয়মিত ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। তবে সর্বশেষ তিন অর্থবছর ধরে এ খাতে সরকারের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য থেকে স্পষ্ট, ভর্তুকি বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগাতে না পারা। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছে। এটি ভর্তুকি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। একদিকে দেশের কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখা হচ্ছে, অন্যদিকে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এটি আরও একটি বড় কারণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার। এছাড়া বাংলাদেশে ভারত ও অন্যান্য দেশের তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। এ বাড়তি ব্যয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে দক্ষতার ঘাটতি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দক্ষ ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। ব্যবস্থাপনা দক্ষতা অর্জনের জন্য দরকার হলে বিদেশ থেকে পরামর্শক আনতে হবে। তাদের কাছ থেকে কারিগরি দক্ষতা রপ্ত করতে হবে। অন্যান্য দেশ কী প্রক্রিয়ায় কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, সে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে হবে।
সর্বোপরি, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদ্যুতের কেনাকাটায় নানা ধরনের দুর্নীতি ও অর্থ অপচয়ের খবর পাওয়া যায়। দুর্নীতি প্রতিরোধে অভ্যন্তরীণ মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং নিজস্ব ব্যবস্থার অধীনে দুর্নীতি প্রমাণসাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া অবৈধ বিদ্যুৎে সংযোগ বন্ধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সার্বিক ব্যবস্থাপনাগত উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে তৎপর হবে বলেই প্রত্যাশা।