Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 7:23 pm

বিদ্যুৎকেন্দ্রের অপ্রয়োজনীয় চুক্তি নবায়ন কাম্য নয়

‘প্রয়োজন না থাকলেও ৫ রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন’ শিরোনামে দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে বৈকি। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ভাড়াভিত্তিক পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টরা নানাভাবে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এর আগেও নাকি এক দফা বিনা প্রয়োজনেই তারা চুক্তি নবায়ন করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। বিনা প্রয়োজনে গোষ্ঠী বিশেষে স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে এ ধরনের উদ্যোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ অর্থ আদায় করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো নানা ধরনের তদবির করেছে। এসব কেন্দ্রের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর সুপারিশও করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় অর্থের এমন অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আমরা জানি, যেকোনো দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ একটি অপরিহার্য উপাদান। এটির গুরুত্ব অনুধাবন করে বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে সব ধরনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। সরকারের প্রথম মেয়াদে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে তাই বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এ লক্ষ্যে ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের নানা ধরনের ছাড়ের পাশাপাশি আইনি দায়মুক্তিও দেয়া হয়েছিল। এমনকি সরকার ধীরে ধীরে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে এসে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়েও তৎপর হয়েছিল। সেই মোতাবেক গত কয়েক বছরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় বর্তমানে যে উৎপাদন সক্ষমতা, তা দিয়েই দেশের মোট চাহিদা মেটানো সম্ভব। কাজেই সরকারের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী, ধীরে ধীরে ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ফিরে আসাই শ্রেয়। সে অনুযায়ী বেশ কয়েকটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি নবায়ন স্থগিত করেছে সরকার। কিন্তু প্রভাবশালী বেশ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি নানা তদবির করে প্রয়োজন না থাকলেও চুক্তি নবায়ন করিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে বলেই জানা যাচ্ছে। এহেন প্রচেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক বৈকি। বেসরকারি কোম্পানিগুলো রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছে; বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।

ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাড়তি সুবিধা দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। এমনকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা-সংবলিত বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ যাতে অপচয় করা না হয়, সে বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি বলে মনে করি। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী যাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতে না পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন বৈকি। সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি ভেবে দেখবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।