বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া পড়েছে ৫৭৩৬ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: ভারত থেকে দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। দেশটির সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন ছয়টি কেন্দ্র থেকে এসব বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এ জন্য মাসে এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়। তবে নিয়মিত ভর্তুকি না পাওয়ায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে ভারত।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, গত অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মোট বিল ছিল ১৬ হাজার ৪৫০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত ৮ আগস্ট পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে ১০ হাজার ৭১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া পড়েছে পাঁচ হাজার ৭৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা মোট বিলের ৩৬ শতাংশ। ১১৮ টাকা বিনিময় হার ধরলে বকেয়ার পরিমাণ ৪৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার।

সূত্রমতে, বর্তমানে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এনভিভিএন (বিদ্যুৎ ভ্যাপার নিগম লিমিটেড) থেকে তিন ফেজে যথাক্রমে ১৬০, ২৫০ ও ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৬০ মেগাওয়াট আসে ত্রিপুরা থেকে। এছাড়া সেম্বকর্প ইন্ডিয়া থেকে ২৫০ মেগাওয়াট, পিটিসি থেকে ২০০ মেগাওয়াট এবং আদানি পাওয়ারের ঝাড়খণ্ড থেকে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়।

শুধু বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য আদানির ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হলেও, সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত আইন পরিবর্তন করেছে ভারত। এক্ষেত্রে নিয়মিত বিল পরিশোধ না করলে বা বাংলাদেশের চাহিদা কমে গেলে আদানির ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎ ভারত সরকারের কাছেও বিক্রি করতে পারবে বলে নতুন আইনে বলা হয়েছে। এদিকে নিয়মিত বিল পরিশোধ না করায় এনটিপিসির ত্রিপুরা কেন্দ্রটির ১৬০ মেগাওয়াটের জায়গায় ৬০ থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি কেন্দ্রগুলো এক হাজার মেগাওয়াট থেকেও মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৭০০ মেগাওয়াটের ঘরে নেমে যাচ্ছে। শুধু আদানির কেন্দ্র থেকে নিয়মিত পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। যদিও গতকাল কেন্দ্রটির একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিল বকেয়া পড়েছে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটির। গত জুন পর্যন্ত এ কেন্দ্রটির বিল জমা পড়েছিল ৯ হাজার ২০২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। তবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অর্থাৎ বকেয়া বিলের পরিমাণ তিন হাজার ২৮৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ভারতের বেসরকারি খাতের অপর দুই কোম্পানির মধ্যে সেম্বকর্প এনার্জির বকেয়া বিল রয়েছে ৯৩২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং পিটিসি ইন্ডিয়ার বকেয়া বিল ৮৮১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

এনটিপিসির তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াটের বকেয়া বিল ২৮৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, ত্রিপুরার ১৬০ মেগাওয়াটের বকেয়া বিল ১১৭ কোটি ২২ লাখ টাকা ও ২৫০ মেগাওয়াটের বকেয়া বিল ৬১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য দেশটির পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তিনটি সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করা হয়। এ জন্য মাসে বিল দিতে হয় গড়ে ১৬ থেকে ১৮ কোটি টাকা। পাওয়ার গ্রিডের তিনটি সঞ্চালন লাইনের বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

পিডিবির কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যুৎ খাতে চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকি বরাদ্দ না পাওয়ায় নিয়মিত বিল ছাড় করা হচ্ছে না। এতে দেশের সরকারি-বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিলও বকেয়া পড়েছে। আর ভারতের বিলের পুরোটা ডলারে পরিশোধ করতে হয়। এতে বিল পরিশোধে চাপ বাড়ছে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রথম জিটুজি ভিত্তিতে এনভিভিএনের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। এ চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর। অর্থাৎ ২০৩৯ সালে এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। আর এনভিভিএনের বাকি ৩০০ মেগওয়াট, পিটিসির ২০০ ও সেম্বকর্পের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয় ২০১৮ সালে। এ তিন চুক্তির মেয়াদ ১৫ বছর। অর্থাৎ ২০৩৩ সালে এ তিন চুক্তি শেষ হবে।

এনটিপিসির ত্রিপুরা কেন্দ্র থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে চুক্তি করা হয় ২০১৬ সালে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ চুক্তি শেষ হয় ২০২১ সালে। পরে তা আরও পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হয়। এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। আর আদানির ঝাড়খণ্ডের কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আ
সা শুরু হয়েছে গত বছর। ২৫ বছর মেয়াদি এ চুক্তি ২০৪৮ সালে শেষ হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০