Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:41 pm

বিদ্যুৎ উৎপাদনে এলএনজি নয় দরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা থেকে সরে এলএনজির (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)।

গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, মহাপরিকল্পনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনার চিন্তা করছে সরকার। পরিবেশ দূষণ কমাতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিলেও এতে মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে না। কারণ এলএনজিতেও পরিবেশ দূষিত হয়। দূষণমুক্ত পরিবেশের জন্য সরকারের উচিত নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া।

‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা বর্জন: সরকারি উদ্যোগ ও কতিপয় সুপারিশ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিদ্যমান মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৫ শতাংশ আসবে আমদানিকৃত এলএনজি ও ৩৫ শতাংশ আসবে আমদানিকৃত কয়লা থেকে। আর ১৫ শতাংশ আসবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে, ১০ শতাংশ আসবে পারমাণবিক শক্তি থেকে ও পাঁচ শতাংশ আসবে জ্বালানি তেল থেকে।

আলোচনায় গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে এসে বিকল্প পদ্ধতি নেওয়ার জন্য একটি প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২২টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব প্রকল্প থেকে ২৩ হাজার ২৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল। এগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে যেগুলোর বাস্তবায়ন এখনও বেশিদূর এগোয়নি সেগুলোতে নতুন করে বিনিয়োগে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ রকম একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে আমরা বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। তবে সরকারের পুরো ব্যাপারটিকে সাধুবাদ জানাতে পারতাম, যদি কয়লা সরে পূর্ণভাবে ক্লিন এনার্জি নবায়নযাগ্য জ্বালানিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো।

খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার কয়লার পরিবর্তে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির চিন্তা করছে।  এ জায়গাটাতে আমাদের যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। আপত্তি থাকার কারণ এর ফলে সরকারের পরিবেশ দূষণ থেকে সরে আশার সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটে না। তিনি বলেন, আমরা বিজ্ঞানী নই, তারপরও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি এলএনজির পরিবেশ দূষণের মাত্রা প্রায় কয়লার সমান। সুতরাং এটাকে পরিবেশ দূষণমুক্ত ভাবার সুযোগ নেই।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রত্যাশিত বেসরকারি বিনিয়োগ না হওয়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা মাত্রাতিরিক্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে  মোয়াজ্জেম বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রিজার্ভ মার্জিন হিসেবে সর্বাধিক ১৫ শতাংশ ওভারক্যাপাসিটি স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে রাখা হয়। বাংলাদেশ এটি ২৫ শতাংশ রাখছে। এটিকে অবাস্তব আখ্যায়িত করে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, এখন এটি সীমা অতিক্রম করেছে এবং রাষ্ট্রের ওপর একটি বিশাল ব্যয়ের বোঝা তৈরি করছে।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরকারের নীতি অবস্থানকে গুরুত্ব দেন। যখন তারা দেখতে পান সরকারের মাস্টারপ্ল্যানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রাধিকারের জায়গায় নেই, ও রকম একটি নীতিকাঠামোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কখনও উচ্চ বিনিয়োগ প্রকল্প নিয়ে আসার বিষয়ে আগ্রহ দেখেন না।

কয়লাভিত্তিক প্রকল্প থেকে সরে এলে ইতোমধ্যে এ খাতে যে বিনিয়োগ হয়েছে তা অপব্যবহার হবে কি-না? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। অনেকগুলোতে জমি উন্নয়নের কাজ হয়েছে। আমরা মনে করি জমির উন্নয়ন হয়ে গেলে সেখানে খুব সহজে নবায়নযোগ্য জ্বালানির কাজ করা যায়।