‘২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর: বিদ্যুৎ বিক্রিতে গড় লোকসান তিন বছরে বেড়ে পাঁচগুণ’ শীর্ষক প্রতিদেন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। এটিকে কোনোভাবেই ভালো খবর বলা যাবে না। খবরটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও অবকাশ নেই। কেননা এটি খোদ রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রতিবেদনের তথ্য।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। যদিও ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছর তা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এর আগে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ওঠানামার মধ্যেই ছিল। তবে দুই বছরে উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও লোকসানের বোঝা কমানো যায়নি, বরং তিন বছরের ব্যবধানে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ বিক্রিতে লোকসান প্রায় পাঁচগুণ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের তিনটি অংশ রয়েছে। এগুলো হলোÑজ্বালানি ব্যয়, স্থায়ী ব্যয়/ক্যাপাসিটি চার্জ এবং পরিবর্তনশীল (ভেরিয়েবল) ব্যয় তথা পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। আর গড় উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তিন শতাংশ সঞ্চালন লোকসান ও ১৫ পয়সা বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন তহবিলের অংশ যোগ করে নির্ধারণ করা হয় বিদ্যুতের গড় সরবরাহ ব্যয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় যে হারে বাড়ে, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয়ও একই হারে বৃদ্ধি পায়। তাই কোন স্তরে জ্বালানি ব্যয় বাড়ছে, সেটি চিহ্নিত করা অসম্ভব নয়। বেসরকারি খাতে কেবলই লোকসান ও ভর্তুকি জোগানোর পরও সাধারণ মানুষের ভরসার স্থল সরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র, যেখানে যাতে জনগণের অর্থের অপব্যবহার কিংবা লোপাট না হয়, সে লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
আধুনিক যুগে বিভিন্ন জ্বালানির সহজলভ্যতার কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বরং কমার কথা। আর আমাদের দেশে এর ব্যয় বাড়ছে এবং এ খাতে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, যেমন সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ুপ্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈবশক্তি (বায়োগ্যাস, বায়োম্যাস, বায়োফুয়েল) প্রভৃতি ব্যবহার করা যায়, এমন বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে সন্দ্বীপ ও কুতুবদিয়ার মতো দ্বীপেÑযেসব এলাকাকে জাতীয় সঞ্চালন ব্যবস্থার আওতায় আনা সত্যি ব্যয়বহুল।
সরকারি হোক আর বেসরকারি, সব ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবেÑযত দ্রুত সম্ভব। এক্ষেত্রে কালক্ষেপণে জনগণের অর্থের অপব্যবহার তথা প্রতি বছর রাষ্ট্রের বিপুল গচ্চা চলতেই থাকবে। বিদ্যুতে অনেক সাফল্য রয়েছেÑএর মধ্যেও বিদ্যুৎবিভ্রাট ও লোডশেডিংয়ে ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি বাড়ে, আবার মাসে মাসে বিলও বাড়ে, এতে সাধারণ মানুষের হতাশা বাড়ে। সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রিতে লোকসান কমিয়ে আনতে প্রয়োজন সর্বব্যাপী উদ্যোগ আর রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। কেবল মুনাফা নয়, কীভাবে সাধারণ মানুষের কাছে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুফল পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।