‘ডিজেলচালিত কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যয় ৫৩ টাকা!’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান। খবরে বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল ১৪৬টি। এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট। আর ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল মাত্র ১৮টি, যার ১২টি সরকারি ও ছয়টি বেসরকারি। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র এক হাজার ২৯০ মেগাওয়াট। এই ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলোয় গত অর্থবছর উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ৫৩ টাকার বেশি। অথচ গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলোয় গড় উৎপাদন ব্যয় তিন টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ গ্যাসচালিত কেন্দ্রের চেয়ে সাড়ে ১৬ গুণ বেশি ব্যয় পড়েছে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এরপরও
এসব কেন্দ্র বন্ধ করা হচ্ছে না। ফলে বিদ্যুৎ খাতের বোঝা হয়ে উঠেছে এসব কেন্দ্র।
২০৩০ সাল এবং তারপরও টেকসই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ কিংবা তার বেশি রাখতে হলে প্রয়োজনীয় জ্বালানির আবশ্যকীয়তাসমূহ পূরণ করতে হবে। বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। জ্বালানি স্থায়িত্ব অর্জন করতে হলে কেবল জ্বালানি সরবরাহ নয়, জ্বালানি ব্যবহারেরও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। কিন্তু শেয়ার বিজের প্রতিবেদন প্রমাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি দক্ষতায় আমরা পিছিয়ে আছি। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় অতিরিক্ত ব্যয় হওয়ায় এগুলো বন্ধ করাই হবে দেশের জন্য কল্যাণকর।
বিভিন্ন পণ্য এবং সেবা প্রদানে আবশ্যকীয় জ্বালানির পরিমাণ কমানো আবশ্যক। একদিকে জ্বালানি নিরাপত্তার উন্নয়ন ও কার্যকর পরিবেশগত ব্যবস্থাপনায় কার্যকর জ্বালানি ব্যবহার করে কার্বন নিঃসরণের কথা বলা হচ্ছে; অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
শিল্প, আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবন এবং সেবা খাতে জ্বালানি কার্যকারিতা এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে নানা কৌশল নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সচেতন করতে সেমিনার-কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। স্কুল পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জ্বালানি সাশ্রয়ে সচেতনতামূলক স্কুলিং প্রোগ্রাম আয়োজন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি দক্ষতাও বাড়াতে হবে।
নি¤œ কার্বন নিঃসরণসহ টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য ব্যবহারকারী পর্যায়ে জ্বলানি ব্যবহার এবং সংরক্ষণের মাধ্যমে জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ মহাপরিকল্পনা ২০৩০-এ ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ডিজেলচালিত কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৫৩ টাকা। তাই জ্বালানি উৎপাদনে অপচয় ও অতিরিক্ত ব্যয় বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সব সরকারি, বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল বসানোর কাজ চলছে। ইনক্যান্ডেসেন্ট বাল্বের পরিবর্তে জ্বালানি এলইডি লাইট বসানো এবং ম্যাগনেটিক ব্যালাস্ট, ইলেকট্রনিক ব্যালাস্ট দ্বারা পরিবর্তনের কাজ চলছে। সাশ্রয়ী বাতি লাইট এলইডি ব্যবহারে ব্যবহারকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। গ্যাসচালিত সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে কম্বাইন সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে রূপান্তরে সরকার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গত পাঁচ বছরে জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ খাতে অর্জন কম নয়। জ্বালানি দক্ষ পণ্যের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংক স্বল্প সুদে পুনঃঅর্থায়ন ব্যবস্থা চালু করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনেও জ্বালানি সাশ্রয়ী ব্যবস্থা ও জ্বালানি দক্ষতা বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।