বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে যতই সাফল্য দাবি করা না হোক কেন, এ খাতে বিপুল রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় তা অনেকটাই ম্লান করে দেয়। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকারের বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকার একদিকে কম দামে জ্বালানি সরবরাহ করছে, অন্যদিকে বেশি দামে কিনছে বিদ্যুৎ।
শেয়ার বিজ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে অনেক দিন ধরেই বলে আসছে, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল) চালু রাখতে সরকার রাষ্ট্রীয় অর্থ লোকসান দিচ্ছে। তীব্র বিদ্যুৎ সংকট মেটাতে তেলে চালিত ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হয়েছিল। জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্র বিদ্যুৎ সংকট মিটিয়েছে অনেকখানি; অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতেও কিছুটা সহায়ক হয়েছে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে দিতে হচ্ছে বড় মূল্য।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘গুটিকয়েক দেশীয় শিল্পগ্রুপ ও ভারতের নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুৎ খাত’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ খাতের সর্বশেষ প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। তথ্যমতে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা গত ১৫ বছর টানা বেড়েছে। এ সময় সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে বেশি। পাশাপাশি এসেছে বিদেশি এবং দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগেও বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ছোট-বড় বিভিন্ন দেশীয় গ্রুপ ও বিদেশি কোম্পানি যুক্ত হয়েছে। তবে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশির ভাগই ছিল কিছু সংখ্যক শিল্পগ্রুপ বা ভারতের হাতে কেন্দ্রীভূত। ফলে দেশের বিদ্যুৎ খাতের বড় অংশই কয়েকটি গ্রুপ ও ভারতের নিয়ন্ত্রণে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, দেশের বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ সামিট গ্রুপের হাতে। এ গ্রুপের অধীনে বর্তমানে ১৪টি ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হলো যথাক্রমে ভারতের আদানি একটি, বাংলাদেশ-চীন মালিকানাধীন পায়রা, বাংলাদেশ-ভারত মালিকানাধীন রামপাল, এস আলম গ্রুপের একটি, ইউনাইটেড গ্রুপের ছয়টি, রিলায়েন্স (ভারত) নির্মাণাধীন একটি, ওরিয়ন গ্রুপ পরিচালিত ছয়টি, ইউনিক গ্রুপ একটি, ডরিন গ্রুপ পরিচালিত ৯টি, কনফিডেন্স গ্রুপ পরিচালিত ৫টি এবং বারাকা গ্রুপ পরিচালিত চারটি উল্লেখযোগ্য।
আধুনিক যুগে বিভিন্ন জ্বালানির সহজলভ্যতার কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বরং কমার কথা। আর আমাদের দেশে এর ব্যয় বাড়ছে এবং এ খাতে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জ্বালানি তেলের (ফার্নেস অয়েল) দাম কমায় বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় অবশ্য কমতে শুরু করেছে। সরকারি হোক আর বেসরকারি, সব ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে কালক্ষেপণে জনগণের অর্থের অপব্যবহার তথা প্রতি বছর রাষ্ট্রের বিপুল গচ্চা চলতেই থাকবে। এখন আমরা জেনেছি, কোন প্রতিষ্ঠান কীভাবে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকার যথাসম্ভব দ্রুত বিদ্যুৎ খাত রাহু মুক্ত করার উদ্যোগ নেবে বলেই প্রত্যাশা।