বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধে ব্যবস্থা নিন

গত পঞ্জিকাবর্ষের সালের প্রথম ৯ মাসে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর পাওনা ছিল ৩৬ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে বড় লোকসান গুনছে পিডিবি। তবে সে ঘাটতি পূরণে বিদ্যুৎ খাতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিচ্ছে না সরকার। এতে পিডিবির কাছে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা বেড়েই চলেছে। কোন প্রতিষ্ঠানের পাওনা কত, তা গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদনে ছক আকারে দেখানো হয়েছে।

আমরা বিশ্বাস করি, বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা আদায়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে গ্রাহকদের কোনো দায় নেই। কোনোভাবেই তাদের যেন দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস (বিআইপিপি) বলে আসছে, বকেয়া বিল ক্রমেই বাড়ছে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না; অর্থ সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামতও করা যাচ্ছে না। অনেক আইপিপি কোম্পানি ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে খেলাপি হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া সর্বশেষ হিসাবে, দেশে উৎপাদনরত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা ছাড়াও পিডিবি বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কাছে গ্যাস বিল বকেয়া রেখেছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বকেয়া বাড়তে থাকলে জ্বালানি সরবরাহকারীদের আস্থা কমতে থাকে, তারা দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তি করতে আগ্রহী হয় না। জ্বালানি সরবরাহে তারা গড়িমসিও করে। বকেয়া দিতে দেরি হলে চুক্তি অনুযায়ী জরিমানাও দিতে হয়। ব্যাংকগুলো নতুন আমদানির ঋণপত্র খোলার ফি বাড়িয়ে দেয়।

এক মাস পরই গরমের মৌসুম শুরু হচ্ছে। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে বাড়তি জ্বালানির প্রয়োজন হবে, আমদানি বাড়াতে হবে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল। টাকার অভাব ও ডলার-সংকটের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানি করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। জ্বালানির অভাবেই গত বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রয়োজন অনুযায়ী চালানো সম্ভব হয়নি। এতে রাজধানীতে দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা এবং গ্রামে আট থেকে ১০ ঘণ্টাও লোডশেডিং করতে হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে কেন্দ্রভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) দিতে হয় বলে ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে, যা নিয়ে নাখোশ অর্থ বিভাগ। আমরা তো মনে করি, শুধু অর্থ বিভাগ নয়, সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ। যে কেন্দ্রগুলো আদৌ কাজেই লাগে না, সেগুলোর জন্য কেন অর্থ পরিশোধ করবে রাষ্ট্র!

আবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিদেশি কোম্পানির দেনা পরিশোধে ব্যাংক প্রয়োজন অনুযায়ী মার্কিন ডলার দিতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল এখন ২৫ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সূত্র মেনে করা হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলারে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জ্বালানি তেল ও কয়লা আমদানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনে কত ডলার লাগতে পারে, তা আগেই জানিয়েছিল পিডিবি। কিন্তু কেন সেটি সমাধানে ব্যবস্থা করা হয়নি, তা নীতিনির্ধারকরাই জানেন। সরকারের উচিত হবে জনভোগান্তি শুরুর আগেই দেশি-বিদেশি পাওনাদারদের বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০