দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘২০২০-২১ অর্থবছর: পিডিবির লোকসান রেকর্ড ১১ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে বলেই বিশ্বাস। আমরা জানি, বিদ্যুৎ একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত। সে কারণে সরকার এ খাতে গত এক দশকের বেশি সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। অবশ্য তার সুফলও পাওয়া গেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের ব্যবস্থাপনায় এখনও বেশ দুর্বলতা রয়েছে বৈকি, যে কারণে প্রতিবছরই এ খাতে বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ লোকসান কমাতে সরকার মনোযোগী হবে বলেই প্রত্যাশিত।
আধুনিক বিশ্ব বিদ্যুৎ ছাড়া একদমই অচল। বর্তমান বিশ্বে বিদ্যুৎবিহীন একটি মুহূর্ত কল্পনা করা যায় না। শীতপ্রধান অনেক দেশে তো বিদ্যুৎ রীতিমতো মৌলিক অধিকারভুক্ত সেবা হিসেবে পরিগণিত। সে কারণে সব দেশই বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকটা উদারহস্ত হয়ে থাকে। কিন্তু কেবল অর্থ বিনিয়োগ করলেই তো হবে না, সে অর্থের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করাও জরুরি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ খাতে দক্ষতার উৎকর্ষ অর্জনে এখনও বেশ পিছিয়ে আছে বৈকি। কেননা এ খাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় এখনও সিস্টেম লস বেশি হয়। তাছাড়া বিদ্যুৎ খাতে চুরি একটি বড় সমস্যা। এ চুরির অন্যতম কারণ বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় আধুনিক পদ্ধতির সংযোজন ঘটাতে না পারা। তাছাড়া দেশের একেক অঞ্চলে বিতরণ ব্যবস্থা একেক রকম। সঞ্চালন লাইনেও কারিগরি নানা পার্থক্য রয়েছে। এসব বিষয় সার্বিকভাবে বিদ্যুৎসেবার দক্ষতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বৈকি।
এ কথা সবার জানা যে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, উৎপাদন সক্ষমতা তার চেয়ে অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এত এত বিনিয়োগের মাধ্যমে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলো যাতে অব্যবহƒত অবস্থায় পড়ে না থাকে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখাও একান্ত আবশ্যক।
তাছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি দক্ষতা অর্জনে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ডিজেল ও ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। অনেক কেন্দ্রে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৫০ টাকার বেশি ব্যয় হয়। এসব কেন্দ্র এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেসব জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে কম খরচ পড়ে, সেসব জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা উচিত বলে মনে করি। সর্বোপরি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামোতে আধুনিকতা আনয়ন অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এ খাতে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল তৈরিতে নজর দেয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে দক্ষতাসম্পন্ন জনবলকে বাড়তি অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার দরকার হলে সেটিও করা উচিত বলে মনে করি। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিদ্যুৎ খাতের লোকসান হ্রাসে আশু পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।