বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি রেকর্ড ২৯ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা!

ইসমাইল আলী: এক যুগের বেশি সময় ধরে বড় অঙ্কের লোকসান গুনছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম মূল্যে বিক্রি করায় লোকসান দিতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। এ ঘাটতি পূরণে পিডিবিকে প্রথমে ঋণ দেয়া শুরু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে সরাসরি ভর্তুকি দেয়া হয়। প্রতি বছরই এ খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। তবে গত অর্থবছর এ খাতে ভর্তুকি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।

পিডিবির তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এতে ২০২১-২২ অর্থবছর রেকর্ড লোকসানের মুখে পড়েছে পিডিবি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত অর্থবছরের জন্য ২৯ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরে পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয় ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে গেছে ১৭ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা বা ১৫২ দশমিক ৬২ শতাংশ।

সূত্র জানায়, ভর্তুকির পুরোটা এখনও ছাড় করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) ভর্তুকি ছাড় করা হয়েছে। এ বাবদ পিডিবিকে দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এখনও ১৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা ভর্তুকি ছাড় বাকি রয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের জন্য আরও সাত হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা ভর্তুকি ছাড়ের জন্য চিঠি দিয়েছে পিডিবি।

এ প্রসঙ্গে পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো ভর্তুকি ওই অর্থবছর ছাড় করা হয়নি। প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছিল। ওই অর্থ ২০২১-২২ অর্থবছর ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আর গত অর্থবছরের ১৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা অনাদায়ী রয়েছে। এর মধ্যে তিন মাসের অর্থ ছাড় করার চিঠি দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এপ্রিলের ভর্তুকি বাবদ চার হাজার ৮৪ কোটি টাকা ছাড়ে চিঠি তৈরি করা হচ্ছে। মে ও জুনে আরও সাত হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা ছাড়ের জন্য হিসাব চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভর্তুকি ছাড়ের গতি অনেক কম। গত অর্থবছরের ভর্তুকির পুরোটা ছাড় হতে চলতি অর্থবছরের ছয় থেকে সাত মাস লেগে যেতে পারে।

পিডিবির তথ্যমতে, সংস্থাটির বড় অঙ্কের লোকসান শুরু হয় মূলত ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে। সে অর্থবছর সংস্থাটির লোকসান দাঁড়ায় চার হাজার ৬২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর সে বছর পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয় চার হাজার কোটি টাকা। পরের (২০১১-১২) অর্থবছর পিডিবির লোকসান আরও বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৬৯৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। তা পূরণে সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় ছয় হাজার ৩৫৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

যদিও ২০১২-১৩ অর্থবছর পিডিবির লোকসান কিছুটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তা পূরণে সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় চার হাজার ৪৮৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। পরের (২০১৩-১৪) অর্থবছর লোকসান আবার বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮০৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সে অর্থবছর সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় ছয় হাজার ১০০ কোটি টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থবছর পিডিবির লোকসান আরও বেড়ে যায়। সে অর্থবছর সংস্থাটির লোকসান দাঁড়ায় সাত হাজার ২৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। তবে পুরোনো ঘাটতিসহ ওই অর্থবছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় আট হাজার ৯৭৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছর পিডিবির লোকসান কমে দাঁড়ায় তিন হাজার ৮৭৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে অর্থবছর সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় চার হাজার ৩৬৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছর পিডিবির লোকসান আবারও বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৪৩৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় তিন হাজার ৯৯৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর পর্যন্ত ভর্তুকি ঋণ হিসেবে দেয়া হতো। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে অনুদান হিসেবে ভর্তুকি দেয়া শুরু হয়। ওই অর্থবছরে পিডিবির লোকসান ছিল রেকর্ড আট হাজার ৩৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর সে বছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল পাঁচ হাজার ৪৮৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

পরের (২০১৮-১৯) অর্থবছর লোকসান কিছুটা কমে দাঁড়ায় আট হাজার ১৪১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় সাত হাজার ৫০০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান কিছুটা কমে দাঁড়ায় সাত হাজার ৪৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সে অর্থবছর ভর্তুকি দেয়া হয় সাত হাজার ৪৩৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছর পিডিবির লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় রেকর্ড ১১ হাজার ৭১৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয় ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। তবে গত অর্থবছরের হিসাব এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি পিডিবি। যদিও খসড়া হিসাবে তা ৩১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০