Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:33 am

বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি তুলে দেয়ার কথা বলে আসছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় আবার এ খাতে ভর্তুকি বন্ধের কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, এখন থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় করা হবে। সরকার এই দুই খাতে যে ভর্তুকি দেয়, সেটা সামনে আর দেয়া হবে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংক ও পাওয়ার ডিভিশন আয়োজিত ‘নিউ মেকানিজম টু সাপোর্ট সিস্টেমেটিক আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড অ্যাকসেস টু ল্যান্ড ফর রিনিউএবল এনার্জি (ইউটিলিটি স্কেল সোলার) ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিতাস আবার গ্যাসের দাম বাড়াতে চায়Ñএমন সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। এখন সরকারের মূল লক্ষ্য সাশ্রয়ী বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা। তার অংশ হিসেবে আগামী দুই বছরের মধ্যে ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এর আগে কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভূমি, অর্থায়ন সংকট এবং বিশ্বব্যাপী সুদের হার বৃদ্ধি বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে বাধা তৈরি করছে। দেশে জ্বালানি রূপান্তর টেকসই করার জন্য প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দেয়া হয়েছে। সোলার হোম সিস্টেম, মিনি-গ্রিড এবং সৌর সেচ ব্যবস্থার মতো বিতরণকৃত নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ সাফল্য পেয়েছে। যেহেতু আমাদের জমির স্বল্পতা রয়েছে; তাই আমরা পরিকল্পনা করছি স্কুল-কলেজের ছাদ, বড় বড় শিল্পকারখানার ছাদগুলোকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগাতে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কপ-২৬এ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জির দেশে রূপান্তর হবে বাংলাদেশ; যা পরমাণু, গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসতে পারে। সে লক্ষ্য অর্জনে আমরা মহাপরিকল্পনা রিভিউ করতে উদ্যোগ নেই। কিন্তু আমদের বড় জনগোষ্ঠীর ছোট দেশে ভৌগোলিক নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের আর্থিক সক্ষমতা, জমির স্বল্পতার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যোগাযোগ অবকাঠামোয় প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়। গত এক দশক ধরে আমরা সোলার ব্যবহারের চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের সোলার হোম সিস্টেমে জোর দিতে বলেছেন। এক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেয়া হয়। এতে সৌরবিদ্যুতে গত ১০ বছরে বিস্ময়কর পরিবর্তন হয়েছে। সবাই এখন জানে, বুঝে সোলার পাওয়ার কি। সরকারি কলেজ, বিদ্যালয়, বেসরকারি শিল্প ভবনে সোলার পাওয়ার ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। যত বেশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার করা যাবে বিদ্যুৎ খাতে তত বেশি খরচের স্থিতিশীলতা আসবে।

এ সময় টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে আমরা বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা করেছি। ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৬০০ একর জমি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে। কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টু পাওয়ার, এলএনজি, উইন্ড, চায়না-হুয়াতিয়া ও পিডিবির চুক্তি হয়েছে। ৬০ লাখের বেশি সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়েছে। কয়েক হাজার সেচপাম্প চলে সৌরশক্তিতে। সব মিলিয়ে ৯৩৬ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার ইনস্টল করা হয়েছে। তবে মোট বিদ্যুতের ৪ শতাংশের কম নবায়নযোগ্য জ্বালানির।

এ সময় জানানো হয়, দেশের তিনটি এলাকা সোলার পাওয়ারের সম্ভাবনা নিয়ে স্টাডি করেছে বিশ্বব্যাংক। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের সৌরবিদ্যুতে বড় একটা পরিবর্তন আসবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেনÑবিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. নুরুল আলম।