প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সভ্য জগতের অপরিহার্য অনুষঙ্গ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া একটি মুহূর্ত কল্পনা করা যায় না। বিশ্বের সব দেশই বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। গুরুত্ব বিবেচনায় আমাদের সরকারও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো শুরু করেছে ৫ মিনিটেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার অভিনব কর্মসূচিÑআলোর ফেরিওয়ালা। সরকারের বড় সাফল্যের মধ্যে একটি হলো বিদ্যুতে স্বয়ংসর্ম্পূণতা। ফলে এটি বলা যায়, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) দেশবাসীর কাছে নিরবচ্ছিন্ন মানসম্মত বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে গ্রাহকের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জনে সংস্থাটি গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান। সংস্থার গ্রাহকরা প্রতারিত, প্রবঞ্চিত হচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন, খবর আসছে বারবার।
গতকাল শেয়ার বিজের ‘বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ঘুষ দিতে হয় ৭.৬৪ শতাংশ গ্রাহককে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রমাণ করে গ্রাহক হয়রানি এখনও চলছে। এ তথ্য খোদ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ভবনে গ্রাহক সন্তুষ্টি জরিপের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। জরিপের প্রতিটি তথ্যই গুরুত্বপূর্ণ। ছয়টি বিতরণ কোম্পানির ১৫ হাজার ২৪৫ গ্রাহকের জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপের উল্লেখযোগ্য হলো: ৬৫ শতাংশ গ্রাহক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পেয়েছে। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ সাপেক্ষে বছরান্তে প্রত্যয়নপত্র দেয়ার নিয়ম থাকলে রয়েছে ৫১.৭৬ শতাংশ গ্রাহক তা পাননি। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহকরা ৯৩ শতাংশ এই সেবা থেকে বঞ্চিত। বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগের রেকর্ড করা হয়েছেÑ৬৩.৭৮ শতাংশ। বিদ্যুৎ না থাকার দুই ধরনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। একটি হচ্ছে পূর্বঘোষিত লোডশেডিং কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ আরেকটি হচ্ছে ঘোষণা ছাড়া বিদ্যুৎ বিভ্রাট। সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হয়েছেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গ্রাহকরা।
জরিপের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণপূর্বক তা দ্রুতই সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হবে। জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেছেন, স্মার্ট প্রিপেইড মিটার চালু হলে গ্রাহকের অভিযোগ থাকবে না। প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত আচরণগত সন্তুষ্টি। আচরণগত সমস্যা দূর করতে, যত আধুনিকায়ন হবে তত মিডলম্যান থাকবে না। তখন সেবার মান বেড়ে যাবে।
আমরাও মনে করি, যথাসম্ভব দ্রুত বিলিং সিস্টেমকে প্রি-পেইড ব্যবস্থায় আনতে হবে। প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা গেলে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, বিদ্যুতের ব্যবহারেও সাশ্রয়ী হবেন। বিদ্যুতের অপচয় হবে না।
গ্রাহকদের বিড়ম্বনার জন্য দায়ী কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিকার করা না গেলে অনিয়ম চলতেই থাকবে এবং তাতে গ্রাহকের দুর্ভোগ বাড়বে। তাই অভিযোগ প্রমাণিত হলে কেউ যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বাইরে না থাকে, সে সংস্কৃতি চালু করতে হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের অফিস ভবন ও অন্যান্য স্থাপনাকে আধুনিকীকরণকে ‘অনন্য অর্জন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু যে আধুনিকীকরণের সুফল ও সুবিধা সাধারণ মানুষ বিশেষ করে গ্রাহক পান না, সেটি আদৌ কোনো সাফল্যই নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রাহকদের ভোগান্তি লাঘবে ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।