বিদ্যুৎ-জ্বালানির বকেয়া দ্রুত পরিশোধে ব্যবস্থা নিন

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সরবরাহকারীদের কাছে ৯৭ কোটি মার্কিন ডলার বকেয়া পড়েছে বাংলাদেশের। জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানি বাবদ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও পেট্রোবাংলার কাছে এই অর্থ পাবে বিদেশি তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো। বৃহস্পতিবার অর্থনীতিবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘পরিবর্তনের পথে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সিপিডি বলেছে, পেট্রোবাংলা ও বিপিসির বকেয়া বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে পেট্রোবাংলা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের কাছ থেকে ছয় মাসের জন্য ৫০ কোটি ডলার সিন্ডিকেট ঋণ নিচ্ছে। সিন্ডিকেট ঋণ সাময়িক সময়ের জন্য স্বস্তির মনে হলেও বিপদ বাড়াবে, কারণ এতে সুদ দিতে হবে।

দেশীয় জ্বালানি উত্তোলনে গুরুত্ব না দিয়ে আমদানিতে জোর দেয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তারা বলেন, পুরোনো গ্যাসক‚পের সংস্কার যথাসময়ে হলে এ সংকট হতো না। যত দ্রুত সম্ভব আমদানি কমানোর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানির দিকে যেতে হবে। তাহলে ডলার সংকট দূর হবে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র একসময় উদ্বৃত্ত ছিল, এখন বাহুল্য হয়ে গেছে। ৫১ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বেকার পড়ে থাকছে, যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। পাশাপাশি পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন করা উচিত হবে না।

সবকিছুর মূলে রয়েছে দায়মুক্তি আইন। প্রতিযোগিতামূলক বাজার থাকলে এমন অসম চুক্তি হতো না।

বিদ্যুৎ সরবরাহ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎ সবচেয়ে কম ব্যবহার হচ্ছে ময়মনসিংহ ও রংপুর জোনে। অথচ গত তিন মাসে এসব জোনেই বেশি লোডশেডিং দেয়া হয়েছে। শুধু উৎপাদন ঘাটতি নয়, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণেও লোডশেডিং বেড়েছে। সঞ্চালন সমস্যার কারণে গত জুনে প্রায় দুই হাজার ৪১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল। আগস্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল পাঁচ হাজার ১৬ ঘণ্টা।

সিপিডি বলেছে, তিন মাস পরপর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে সংস্থাটি। এটি নাগরিকদের সচেতন করবে ঠিকই, কিন্তু নীতিনির্ধারক তথা সরকার আমলে না নিলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। ২০১০ সালে প্রণীত জরুরি বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ আইন ক্যাপাসিটি চার্জের নামে অর্থ অপচয়ের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এছাড়া একেক কোম্পানির সঙ্গে একেক শর্তে চুক্তি করা হয়েছে। প্রতি বছর এ খাতে রাষ্ট্রে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, কিন্তু সে অর্থে জনগণ উপকৃত হচ্ছে না। শীত মৌসুম চলে আসায় এখন বিদ্যুতের ব্যবহার কমছে। আমরা মনে করি, সময় থাকতে বকেয়া পরিশোধ না করলে আসন্ন গ্রীষ্মেই বিদ্যুতের বড় বিপর্যয় দেখা দেবে। এলএনজিতে আমদানিনির্ভরতার কারণে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে নতুন ক‚প অনুসন্ধান না করায় ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে দেশীয় উৎসের গ্যাসের মজুত। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৫ সালের মধ্যে নতুন করে যে ৪৬টি ক‚প খননের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তা বাস্তবায়নে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০