নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি ও চুরি করে জ্বালানি খাতের সর্বনাশ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য দুর্নীতি ও লুটপাট করা। সুতরাং তাদের আর কোনো সুযোগ দেয়া যাবে না। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জ্বালানি ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন বিদ্যুৎ, তারপর জ্বালানি তেল, এরপর দেখবেন রিজার্ভ শূন্য হচ্ছে। এখন আর অনেক দফা নেই, দফা একটাইÑএই সরকারের পদত্যাগ।’ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আর সময় নেই। এখন জেগে উঠতে হবে। ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী ও দুর্নীতিবাজ সরকারকে একটা ধাক্কা লাগাতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কোনো ঘাটতি নেই। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, ঘাটতি নেই তো লোডশেডিং কেন? কেন তেল রেশনিং করছেন? জ্বালানি তেল রেশনিং করছেন, গ্যাস রেশনিং করছেন?
ফখরুল অভিযোগ করেন, কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগ বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে টাকা ধার নেবে না। তিনি বলেন, গতকাল পত্রিকায় তিনি দেখেছেন, আইএমএফের কাছে আওয়ামী লীগ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ধার চেয়েছে। এই সরকার মুখে বড় বড় কথা বলে। অনর্গল মিথ্যা কথা বলে, মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখে। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে তারা শূন্য হয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পত্রিকায় লেখা হয়েছে, দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ৩১ বিলিয়ন ডলার। এই ৩১ বিলিয়ন ডলারও সঠিক নয়। এখানে প্রায় আট থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার আছে শুধু সোনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর শুধু ব্যবহার করা যায় ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি নয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুদিন আগে হাতিরঝিলে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা আতশবাজি ফুটিয়েছে। সেখানে বলেছে, শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়ে গেল, লোডশেডিংমুক্ত। আজকে এই শহরে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ যায়। আর গ্রামে এখন বোরো মৌসুম, যেখানে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন, সেখানে সাত থেকে আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। অথচ এই সরকার বিদ্যুতের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাঠিয়েছে।
২০২১-২২ সালে বিদ্যুৎ খাতে ২৮ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ১০টি কোম্পানি আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই নিয়ে গেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় মায়ের কোলে থাকা সাত মাস বয়সী শিশু সুরাইয়ার মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শিশু সুরাইয়ার মাথার খুলি পুলিশের গুলিতে উড়ে গেছে। এটাই বাংলাদেশের চিত্র। সুরাইয়ার মায়ের কান্না থামছে না। কে তাকে সান্ত¡না দেবে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, বিদ্যুৎ দিতে না পেরে সরকার জনগণের হাতে হারিকেন ও মোমবাতি ধরিয়ে দিয়েছে। মাত্র ঘর থেকে বের হওয়া শুরু হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশে ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে, ঘটতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি ও দলের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।