বিদ্যুৎ বিতরণ ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার পরিচয় দিন

দেশে প্রয়োজনের তুলনায় এখন বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান সক্ষমতা বিদ্যমান চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও এখনও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। প্রয়োজেনের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকায় এখন অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকছে, তবু  লোডশেডিং। এটি কীসের সঙ্গে তুলনীয় আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।

গতকাল শেয়ার বিজে ‘যশোর অঞ্চলে বাড়ছে লোডশেডিং, গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন’ শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে জানা গেল, শুধু জনজীবন অতিষ্ঠ নয়, অর্থনীতিও স্থবির হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঈদ সামনে রেখে রোজার শুরুর দিক থেকেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো জমে ওঠে। কিন্তু বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে লোডশেডিংয়ের কারণে অর্ডার নেয়া পোশাক যথাসময়ে সরবরাহ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন দর্জি দোকানিরা। দিনে ও রাতে অধিকাংশ সময়েই বিদ্যুৎ থাকছে না। যশোরের দুই পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, তাদের অধীনে চাহিদার চেয়ে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সে কারণে সারাদেশে বিদ্যুতের সংকট দেখা দিয়েছে, এমনই বলছেন পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা। কিন্তু বিদ্যুৎবিভ্রাট এই প্রথম নয়। বছর দুয়েক আগে খোদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ওই সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন তিনি।

বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে বারবার উচ্চমূল্যের ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নবায়ন এবং কয়েক বছর ধরে বেসরকারি খাতে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমান সরকারের সাফল্য অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই সাফল্যের জন্য রাষ্ট্র তথা জনগণকে অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ। ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) নামীয় এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বোঝা টানতে হবে ১৫ বছর। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে মানানসই বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সক্ষমতা না থাকায় মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

গত ২১ মার্চ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা, সাগরের তলদেশে সাবমেরিন কেবল বিছিয়ে পৌঁছানো হয়েছে বিদ্যুৎ। এখন ছোট আকারে ভ্রাম্যমাণ ধানকল থেকে শুরু করে হাঁস-মুরগির খামার, যন্ত্রচালিত যানে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। বদলে গেছে হতদরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার মান। গ্রামে বিদ্যুৎ যাওয়ার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে পড়েছে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও বড় অবদান রাখবে আমরা মনে করি। গ্রিড-অফগ্রিড মিলিয়ে যেখানে দেশের সব এলাকা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায়, সেখানে যশোরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে, এটি কাম্য নয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে মন্ত্রণালয়, পিডিবি, আরইবি, পাওয়ার সেল এবং বিতরণ কোম্পানিগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০