‘সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ যাচ্ছে ঢাকায়, অন্য অঞ্চলে লোডশেডিং’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে; সেটি সাধারণ মানুষকে হতাশ করবে বলেই ধারণা। প্রতিবেদনের তথ্য, ২২ এপ্রিল রাত ৯টায় রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। ওই সময় ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ৫ হাজার ৪১০ মেগাওয়াট বা ৩৫.০৪ শতাংশ।
চলমান তাপপ্রবাহে অস্থির হয়ে পড়েছে দেশে জনজীবন। তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। অথচ ঢাকার তুলনায় অন্যান্য শহর ও গ্রামাঞ্চলে চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে না। এতে সারাদেশে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে।
‘মানুষ জাতি’ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন, ‘এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত একই রবি শশী মোদের সাথী/ শীতাতপ ক্ষুধা তৃষ্ণার জ্বালা সবাই আমরা সমান বুঝি…।’ কিন্তু আমাদের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার ধরনে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশের মানুষ শীতাতপের জ্বালা সমান বোঝেন না। হয়তো এ জন্যই ঢাকা অঞ্চল ছাড়া অন্যান্য শহর ও গ্রামাঞ্চলে চাহিদামতো বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে না।
সারাদেশে অসহনীয় গরম পড়েছে, চলছে দাবদাহ। গরমে, দাবদাহে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। এ সমস্যা শুধু ঢাকা অঞ্চলের মানুষের একার নয়। দেশের সব অঞ্চলের মানুষের। তাই বলা যায়, বিদ্যুৎ বিতরণে ন্যায্যতা নেই! এটি বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার পরিপন্থি।
এখন যে গরম ৩৯-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তার চেয়ে অনেক বেশি গরম হয়েছিল ১৯৬০ সালে। তখন ঢাকায় তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তখন বিদ্যুৎ এত ছিল না। কিন্তু যেসব এলকায় ছিল তারা প্রায় সমভাবেই পেত। এখনকার মতো বৈষম্য ছিল না। এখন গরমে সড়কের বিটুমিন গলে যাওয়ার খবরে আমরা বিচলিত হচ্ছি। কিন্তু বৈষম্যের খবর আমাদের মনকে কতটা ছুঁয়েছে! গরমের তীব্রতায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেয়ার আদেশ জারি করা হয়েছে। কিন্তু কর্মজীবীদের পরিত্রাণে শুধু পরামর্শ দিয়েই দায়িত্ব শেষ। কৃষক কিংবা শ্রমিক হোক, ক্লান্তি নিবারণে বাসায় ফিরে স্বস্তি পেতে বিদ্যুতের সুইচ টেপেনÑকিন্তু বিদ্যুৎ নেই। কিছু এলাকার মানুষ ন্যূনতম বিদ্যুৎ পান না অন্যদিকে রাজধানীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসির ব্যবহার। অফিসে এসি, গাড়িতে এসি, বাড়িতে এসি, বাজারে এসি, মসজিদ-মন্দির-গির্জায় এসি। ইটভাটার ধোঁয়ার মতো এসব এসির গরম বাতাস গ্রীষ্মের গরমকে আরও অসহনীয় করে তুলছে। রাস্তার কর্মজীবীদের সে কী দুর্বিসহ অবস্থা!
সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের নির্দেশেই বিদ্যুৎ সরবরাহে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে রাজধানীকে। কিন্তু রাজধানীর বাইরে ঢাকা অঞ্চলের অন্যান্য জেলায় এবং দেশের সর্বত্র লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আনলে বিদ্যুৎ না পেলেও কারও মনে ক্ষোভ থাকবে না। নিজেদের বঞ্চিত মনে করবে না সাধারণ মানুষ। ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে দিনে সেচ অঞ্চলগুলো অগ্রাধিকার পায়। রাতে অগ্রাধিকার পায় শিল্পাঞ্চলগুলো। তাই লোডশেডিং ঢাকার বাইরে বেশি হয়। জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তনের কারণে মানুষ হয়তো গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকছে। কিন্তু এর পর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকলেই স্বস্তিতে ঘুম যেতে পারে সাধারণ মানুষ। কিন্তু তখনও লোডশেডিং! বিদ্যুৎ বিতবরণ ব্যবস্থায় ন্যায্যতা নিশ্চিত করে লোডশেডিং কমিয়ে আনায় মনোযোগ বাড়াতে হবে নীতিনির্ধারকদের।