শেয়ার বিজ ডেস্ক: জ্বালানি সংকটে ভুগছে আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশেষ করে বিদ্যুৎবিভ্রাট নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই দেশটিতে। বিদ্যুৎ হ্রাসের কারণে ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। তাদের অভিযোগ, লাভের পুরোটা শেষ করে দিচ্ছে বিদ্যুৎ সমস্যা। ব্যাহত হচ্ছে অর্থনৈতিক কার্যক্রম। তাদের ভাষায়, এ সমস্যার শেষ নেই। খবর: ডেইলি সাবাহ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গের সোয়েটো এলাকার জনপ্রিয় পানশালা ও রেস্তোরাঁ ন্যাটিভ রিবেলসের সহ-কর্ণধার মাসেছাবা ননইয়ানে বলেন, লাভের গুড় খেয়ে ফেলছে জেনারেটর। সপ্তাহে যা আয় হয়, তার প্রায় পুরোটাই জেনারেটরের পেছনে ব্যয় করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করেছিলাম কভিড-১৯ মহামারি বেশ খারাপ। তার চেয়ে আরও জঘন্য দিনে আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকা, যে সমস্যায় ভুগছি আমরা। ৩৩ বছর বয়সী এই নারী উদ্যোক্তা আরও বলেন, এটা সত্যিই আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের জন্য ভীষণ কষ্টের। বাধ্য হয়ে কর্মী ছাঁটাই করতে হচ্ছে। কীভাবে পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাব, তা নিশ্চিত নয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্ধারিত ব্ল্যাকআউট বেশ ভোগাচ্ছে দেশটির বাসিন্দাদের। এই ব্ল্যাকআউট দেশটিতে লোডশেডিং নামে পরিচিত, যা বছরের পর বছর ধরে ভোগাচ্ছে এর নাগরিকদের। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চরম মাত্রায় পৌঁছেছে এটি। চলতি মাসে যত লোডশেডিং হয়েছে, তা সময়ের হিসেবে জড়ো করলে প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি হবে। দিনে বেশ কয়েকবার লোডশেডিং হচ্ছে, প্রতিবার যা দুই থেকে চার ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের অনুমান, দিনে আট ধাপে যে লোডশেডিং হয়, তাতে প্রতিদিন দেশটির স্থানীয় মুদ্রায় অতিরিক্ত প্রায় ৫০০ মিলিয়ন র্যান্ড (প্রায় তিন কোটি ডলার) খরচ হয়। সরকার জানায়, এ সংকটের জন্য দায়ী কয়লাখনি এসকম। দীর্ঘদিন ধরে এ খনিতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ চলছে। এখানে শ্রমবিরোধ তুঙ্গে থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে বিশেষ পদক্ষেপ নেয় এসকম। চলতি মাসের শুরুতে তারা শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এরপরও উল্লেখজনক হারে উৎপাদন বাড়েনি।
উইটওয়াটারসর্যান্ড ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ইসমাইল ফাসানায়া বলেন, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়ছে দেশটির শ্রমবাজারে। লোডশেডিংয়ের কারণে অনেকে চাকরি হারাবেন, এতে উৎপাদন আরও কমবে। ফলে বাড়বে খরচ, যা শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করবে। এসব সমস্যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করবে বলে জানান তিনি।
ফাসানায়া আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো জেনারেটরের পেছনে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে ব্যবসার খরচ বাড়ছে। এ কারণে স্থানীয় অনেক উদ্যোক্তা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এমনকি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ হারাচ্ছেন। তিনি জানান, কভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশের ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মজীবী বেকার হয়েছেন, যা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে নেতাদের।
দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এ ঘটনা নিয়ে বেশ চাপে রয়েছেন। গত শুক্রবার তিনি জানান, শিগগির বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণের উপায় নিয়ে ঘোষণা দেয়া হবে। তবে কীভাবে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে, তা স্পষ্ট না হলেও তিনি জানান, এসকমের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা দেয়া হবে। গত বছর এসকমের একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধের লক্ষ্যে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানায় সরকার। তখন বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের ১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ঘরের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করছেন অধিবাসীরা। তবে অনেক করপোরেট জ্বালানি ব্যবহারকারীদের কাছে জাতীয় গ্রিডই বিদ্যুতের একমাত্র উৎস, যার ৯০ শতাংশের জোগানদাতা এসকম।
গত মে মাসে পার্লামেন্টে জ্বালানিমন্ত্রী ওয়েডে মানটাশে জানান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গ্যাস, কয়লা, জীবাশ্ম, পরমাণুÑসব প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।