২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কুইক রেন্টাল ও অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বুধবার সিপিডি আয়োজিত এক সেমিনারে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়। এতে উপস্থাপিত ‘বাংলাদেশের জ্বালানি রূপান্তর নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি’ শিরোনামে নিবন্ধে জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানের চেয়ে সরকার এখনও জোর দিচ্ছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানোর দিকে। এলএনজি আমদানির জন্য নতুন নতুন অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।
সিপিডির নিবন্ধ বলছে, ২০২৩ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতার ৪১ শতাংশ অলস ছিল। চাহিদার চেয়ে সক্ষমতা বেশি থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে কেন্দ্রভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) দিতে হচ্ছে সরকারকে। তাই বিদ্যুতের চাহিদার প্রক্ষেপণ পুনরায় মূল্যায়ন করা উচিত, যাতে নতুন করে আর অতিরিক্ত সক্ষমতা না বেড়ে যায়। একই সঙ্গে কয়লা থেকে সরে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে জোর দিতে হবে। আর জ্বালানির দাম নির্ধারণে যেন ভোক্তার ওপর চাপ না পড়ে। জ্বালানি তেল ও এলএনজির বিল দিতে ডলার জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে বিপিসি ও পেট্রোবাংলা। রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুটির ৭০ কোটি ডলার বকেয়া জমেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির জন্য ডলারের চাহিদা আরও বাড়ছে। গতকালই শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছর: ছয় মাসে পিডিবির লোকসান ২২ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা’। সিপিডির নিবন্ধ এবং শেয়ার বিজের উপরি-উক্ত প্রতিবেদনের খবরকে কোনোভাবেই ইতিবাচক বলা যাবে না। সিপিডির অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য বলেন, ২০০৮ সালে মানুষ বিদ্যুৎ-সংযোগের দাবি জানাত। এখন আর কেউ এটা জানায় না। মানুষ বিদ্যুৎ পেতে চায়, উৎস জানতে চায় না।
সংসদ সদস্য অসত্য বলেননি। কিন্তু এটি স্বীকার করতে হবে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ব্যয় হচ্ছে রাষ্ট্রে শত শত কোটি টাকা; যেগুলো আদৌ কাজে লাগছে না। ক্রান্তিকালে একান্ত বাধ্য হয়ে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। এখন এত সাফল্যের মধ্যে এগুলোর ওপর নির্ভরতা আমাদের বিস্মিত করে। আমরা সিপিডির বক্তব্য বিবেচনা করতে পারি। তাদের বক্তব্যে জন-আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। ‘মানুষ বিদ্যুৎ পেতে চায়, উৎস জানতে চায় না’ এমন যুক্তি দেখিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া ‘ঋণ করে ঘি খাওয়ার’ শামিল।
ঢালাওভাবে পরিকল্পনাহীনভাবে কোনো একক উৎসের ওপর নির্ভর করার যুক্তি নেই। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র কিংবা সৌরবিদ্যুৎÑকোনোটিতে অতি নির্ভরতাসমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধের পরিচয় দিতে হবে। ভারত ও চীন বিশ্বের সর্বোচ্চ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী, আবার দেশ দুটি সর্বোচ্চ কয়লাবিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তাই খুবই সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
ভ‚তত্ত¡বিদরা বলছেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের দেশ। অথচ আমরা যথাযথ অনুসন্ধানই করছি না। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থায়ী সমাধান নয়। কিন্তু সেটিতেই পড়ে আছি আমরা। এজন্য অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে দেশকে। আমাদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জ্বালানির প্রভাব সব খাতে পড়ে। তাই এ খাতকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।