শেয়ার বিজ ডেস্ক: নতুন সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারতের আদানি গোষ্ঠী। এবার ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের দুটি বিদ্যুৎ কোম্পানির সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি নিয়ে শুরু হয়েছে এই সমালোচনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস শাসক দল বিজেপির সঙ্গে আদানিদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কথা বলছে। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যুতের দাম নিয়েও। খবর: রয়টার্স ও দ্য হিন্দু।
তাপ ও নবায়নযোগ্য উৎস থেকে মোট ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে আদানি গোষ্ঠী। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ২৫ বছর মহারাষ্ট্রের দুটি কোম্পানিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে আদানি গোষ্ঠীর দুই সংস্থা আদানি পাওয়ার ও আদানি গ্রিন এনার্জি। দুই মাস পর মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন, এর ঠিক আগে এই চুক্তি নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মহারাষ্ট্রে এখন জোট সরকার ক্ষমতায়, এই সরকারের বৃহত্তম অংশীদার বিজেপি। স্বাভাবিকভাবে তাদের উদ্দেশে কংগ্রেসের কটাক্ষ, নির্বাচনে জোটের পরাজয় একরকম নিশ্চিত। সে জন্য নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে আদানিদের সেবা করতে এই চুক্তি করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রের সরকারি সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, এখন তারা যে দামে বিদ্যুৎ কেনে, তার চেয়ে কম দামে আদানিদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
এই দরপত্রে আরও অংশগ্রহণ করেছিল জেএসডব্লিউ ও টরেন্ট পাওয়ার। তাদের পেছনে ফেলে এই প্রকল্পের কাজ পেয়েছে আদানি গোষ্ঠী। তবে দরপত্রের পদ্ধতি ও বিদ্যুৎ কেনার খরচ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ নিয়ে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, মহারাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন সরকারের ভরাডুবি হবে। শেষ কয়েকটা দিন মোদানি এন্টারপ্রাইজ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। প্রসঙ্গত মজা নেই মোদানি বলতে মোদি+আদানি-কে বোঝানো হয়। এক্স প্ল্যাটফর্মে জয়রাম রমেশ আরও লিখেছেন, প্রতিযোগিতা কমানোর জন্য দরপত্রের সাধারণ নির্দেশিকায় শর্ত বদল করা হয়েছিল। কংগ্রেসের আরও অভিযোগ, চুক্তিতে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বলা হয়েছে। এর জন্য দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মেগাওয়াট প্রায় ১২ কোটি রুপি। কিন্তু আদানিরাই এই পরিমাণ বিদ্যুৎ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভেলের কাছে মাত্র সাত কোটি রুপিতে এবং এনটিপিসি ও ডিভিসির কাছে বিক্রি করে ৮-৯ কোটি রুপিতে।
সৌর বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও দাম বেশি ধরা হয়েছে বলে রমেশের অভিযোগ। প্রতি ইউনিট সৌর বিদ্যুতের গড় বাজারমূল্য যেখানে ২ দশমিক ৬৫ রুপি, সেখানে আদানিদের দেয়া হবে ২ দশমিক ৭ রুপি। সেই সঙ্গে রমেশের প্রশ্ন, ২৮ হাজার কোটি রুপির এই প্রকল্পের শতভাগ অর্থায়ন মহারাষ্ট্র সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় করবে কি না।
কিছুদিন আগে মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তি পুনর্নির্মাণের কাজ আদানিদের দেয়া হয়, এ নিয়েও বিজেপির তুমুল সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। বিদ্যুৎ চুক্তিও নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়ে আসছে তারা। হিনডেনবার্গ রিসার্চের অভিযোগের জেরে এমনিতেই বিপর্যস্ত ভারতের আদানি গোষ্ঠী। তারপর দেশের ভেতরেও একের পর এক অভিযোগ উঠছে তাদের বিরুদ্ধে। এদিকে আদানি গোষ্ঠী কেনিয়ায় পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনের জন্য একটি বড় চুক্তি পেয়েছে। কেনিয়ার প্রেসিডেন্টের এক আর্থিক উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভারতের আদানি গোষ্ঠী এবং আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের একটি ইউনিট কেনিয়ায় পাইপ ট্রান্সমিশন লাইনের চুক্তি পেয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কনসেশনের আওতায় এই চুক্তি দেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা ডেভিড এনডির মতে, পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনের জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কনসেশনের পরিমাণ হল ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি ডলার। তিনি আরও বলেছেন, ভারত সরকার আদানি গোষ্ঠী এবং আফ্রিকা ৫০-কে কেট্রাকোর মাধ্যমে নতুন ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের জন্য পিপিপি ছাড় দিয়েছে। আফ্রিকা ৫০ হলো, আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের একটি ইউনিট, যা পরিকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করে। যদিও আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বা আদানি গোষ্ঠী এই প্রোজেক্ট সম্পর্কে এখনও আনুষ্ঠানিক তথ্য দেয়নি।