বিনার উন্নত জাতের মরিচ ও রসুন উদ্ভাবন

রবিউল আউয়াল রবি, ময়মনসিংহ: উচ্চফলনশীল জাতের অপ্রতুলতার কারণে বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় মরিচ ও রসুনের ফলন অনেক কম। ফলে এর উন্নতজাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা শুরু করে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। দেশে রান্নার জন্য মরিচ ও রসুনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর সে চাহিদা মাথায় রেখে বিনা তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার উন্নত জাতের মরিচ ও রসুন উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে ইনস্টিটিউট। পাশাপাশি কৃষকদের লাভবান করতে জাত দুটি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।

পরীক্ষামূলকভাবে ময়মনসিংহ সদরের সুতিয়াখালীর কাশিয়ারচরে বিনার তত্ত্বাবধানে চলতি বছর (অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর) মাসে চার বিঘা জমিতে বিনা মরিচ-১ ও পাঁচ বিঘা জমিতে বিনা রসুন-১ শীতকালীন মৌসুমে চাষাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইনস্টিটিউট সূত্র জানিয়েছে, নতুন এ জাতের মরিচের ফলন প্রচলিত জাতের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে। চারা লাগানোর মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর গাছে ফুল আসা শুরু করে। পরবর্তী ২৮ দিনের মধ্যে কাঁচামরিচ পাওয়া যায়। সুগন্ধিযুক্ত ও ঝাল তুলনামূলক কম। গাছের আকার খাটো ও ঝোপালো। প্রথম মরিচ সংগ্রহের পর গাছে ফলনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আকারে বড় ও মাংসল হয়ে থাকে। সাধারণত ৯ থেকে ১২ বার কাঁচামরিচ তোলা যায়।

গবেষকদের মতে, নতুন এ জাতের রসুন প্রচলিত জাতের তুলনায় বেশি কার্যক্ষম। বিনা রসুন-১ প্রতি হেক্টরে ১৩ থেকে ১৫ টন উৎপাদন করা সম্ভব, যা অন্য জাতের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বেশি। রোপণের পর মাত্র ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যে রসুন ঘরে তোলা যায়। ঝাঁজ বেশি হওয়ায় রান্নায় রসুনের পরিমাণও লাগে কম। আকারে বড় হওয়ায় উৎপাদন বেশি হয়। এ রসুনের উৎপাদন খরচ অনেক কম এবং রোগ-বালাই, পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে কম।

জাত দুটির উদ্ভাবক বিনার বিজ্ঞানী ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. রফিকুল ইসলাম। তিনি শেয়ার বিজকে জানান, বিনা মরিচ-১ জাতটি দেশের বিভিন্ন মসলা উৎপাদনকারী অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও কোনো ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়ের আক্রমণ করেনি। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অ্যানথ্রাকনোজ রোগ, থ্রিপস ও জাবপোকার প্রতি সহনশীলতা লক্ষ করা গেছে। সে ক্ষেত্রে জমিতে চারা রোপণের পূর্বে ডিডি মিকচার বা ফুরাডন-৫জি দ্বারা মাটি শোধন করে নিলে এসব রোগের প্রকোপ নিশ্চিত কমে যাবে।

ইনস্টিটিউট সূত্র আরও জানায়, বিনা মরিচ-১ মিউট্যান লাইন ঈযরষরফ৭৫চ১ এর জার্মপ্লাজমটি ২০১২ সালে চীনের স্থানীয় জাত থেকে কৌলিক সারি হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। এই কৌলিক সারিটি সাইবারডর্ফ ল্যাবরেটরি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার বীজে বিভিন্ন মাত্রায় রেডিয়েশন (৭৫ গ্রে, ১৫০ গ্রে ও ৩০০ গ্রে) প্রয়োগের ফলে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য দেখা যায়। সেখান থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম মিউট্যান্ট প্রজন্ম ময়মনসিংহ, ঈশ্বরদী, মাগুরা, রংপুর, বগুড়া, খাগড়াছড়ি ও কুমিল্লার উপকেন্দ্র এবং কৃষকের মাঠে ৪ থেকে পাঁচ বছর শীত মৌসুমে ব্যাপকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তুলনামূলক ফলন মূল্যায়ন করা হয়। এরপর অগ্রগামী মিউট্যান্টটি শীত মৌসুমে রোপণের জন্য (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্যে এপ্রিল) ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ড ২০১৭ সালে বিনা মরিচ-১ উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে চাষাবাদের জন্য নিবন্ধিত হয়। আমরা বিনা খরচে চাষিদের এ জাতটি দিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পরিকল্পনা করছি।

বিনা রসুন-১- ভারতের নদীয়া থেকে রসুনের তিনটি জেনোটাইপ সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে অঈ-৫ কোলিক সারিটির ফলন বাংলাদেশে চাষাবাদ হয় এমন অন্য জাতের তুলনায় বেশি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যথাযথভাবে ট্রায়াল সম্পন্ন করে জেনোটাইপটি বিনা রসুন-১ নামে ২০১৭ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কৃষকপর্যায়ে সারাদেশে চাষাবাদের জন্য নিবন্ধন করে। এর আগে দীর্ঘ তিন বছর এ জাতটি নিয়ে গবেষণা করে সাফল্য পাওয়া যায়।

এ প্রসঙ্গে বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, বিনা মরিচ-১ জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় ১৩০ থেকে ১৪০ ভাগ বেশি ফলন দেয়। এ জাতের ফলন (গ্রিনচিলি) প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৩৫ টন পাওয়া যায়। এছাড়া বিনা রসুন-১ জাতটি অন্যান্য জাতের তুলনায় আকারে বড় হয়। এর প্রতিটি রসুনের কন্দে ২৪ থেকে ৩০টি কোয়া থাকে। এর উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কম এবং রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে খুবই কম। দীর্ঘ গবেষণার পর এই জাতগুলো উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। দেশের প্রতিটি প্রান্তের চাষিদের কাছে এ জাতটি ছড়িয়ে দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ দুটি জাত চাষাবাদ করলে খরচ কমার পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হবে চাষিরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০