শেয়ার বিজ ডেস্ক : বায়ুদূষণ রোধে অভিনব এক উদ্যোগ নিচ্ছে জার্মানি। গণপরিবহন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে বিনা টিকিটে যাতায়াতের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে দেশটির সরকার। প্রথমে পাঁচটি শহরে পরীক্ষামূলকভাবে এ সেবা চালু করা হবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বায়ুদূষণ রোধের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সবচেয়ে বড় গাড়িনির্মাতা দেশটি কার্বন নিঃসরণের দায়ে জরিমানা এড়াতে এ উদ্যোগ নিচ্ছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
দেশটির সবচেয়ে বড় গাড়িনির্মাতা কোম্পানি ভক্সওয়াগন কার্বন নিঃসরণ কেলেঙ্কারির দুই বছর পর সরকার বায়ুদূষণ রোধে অভিনব এ উদ্যোগের কথা ভাবছে।
সম্প্রতি জার্মানির পরিবেশমন্ত্রী, পরিবহনমন্ত্রী ও ফেডারাল চ্যান্সেলরের সই করা এ উদ্যোগ-সংক্রান্ত একটি চিঠি ইউরোপিয়ান কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এখন রাজ্য সরকার ও মিউনিসিপ্যাল নেতাদের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে।
জার্মানির সরকারের মুখপাত্র স্টিফেন সাইবার্ট বলছেন, আমরা উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত। বাতাসের শুদ্ধতা বাড়াতে এবং ডিজেলচালিত গাড়িগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা এড়াতে যা যা করা প্রয়োজন, সরকার তা-ই করবে।
তবে এ উদ্যোগ এখনই বাস্তবায়নে রাজি নয় শহর ও স্থানীয় প্রশাসনগুলো। তারা মনে করছে, এটি দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রকল্পের অংশ হতে পারে, তবে এখনই এটি বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা রয়েছে।
তারা যেসব সমস্যা দেখাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑএ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে গণপরিবহনের চাহিদা বেড়ে যাবে। এর জন্য আরও গণপরিবহন প্রয়োজন হবে। লোকবলের দরকার হবে, এর জন্য অনেক অর্থের দরকার হবে।
জার্মানির পরিবেশমন্ত্রী জানান, পরিবেশদূষণকারী ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে চাচ্ছি। গণপরিবন ব্যবহারে মানুষকে আগ্রহী করতে বিনা টিকিটে সেবা দেওয়ার কথা ভাবছি।
ইউরোপিয়ান কমিশনের মতে, এ অঞ্চলের ১৩০টি শহরে বায়ুদূষণের কারণে বছরে চার লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ এবং বছরে ২৪ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার স্বাস্থ্য খাতে খরচ হয়।
সংস্থাটি সদস্য দেশগুলোকে বায়ুদূষণ রোধে সীমা বেঁধে দিয়েছে। যেসব রাষ্ট্র এ লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হবে তাদের বিচারের মুখোমুখি হবে। আর্থিক জরিমানাও করবে কমিশন।
২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জার্মানিতে অতিরিক্ত কার্বন নিগর্মনকারী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ২৬ লাখ গাড়ি বিক্রি করেছে দেশটির বহুজাতিক গাড়ি কোম্পানি ভক্সওয়াগন। আর এতে দূষণের কবলে শিগগিরই ইউরোপের কয়েক হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কারচুপি করে জার্মানিতে বিক্রি হওয়া ২৬ লাখ গাড়ির মেধ্য ভক্সওয়াগন, অডি, স্কোডা ও সিট ব্র্যান্ড রয়েছে। এ সংখ্যা দেশটির মোট ডিজেল বহরের এক-পঞ্চমাংশ।
প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গাড়ির বিক্রি বাড়াতে ২০১৫ সালে গোপনে চতুরতার পথ বেছে নেয় জার্মানির বহুজাতিক গাড়ি কোম্পানি ভক্সওয়াগন। প্রতিষ্ঠানটি তাদের তৈরি গাড়িতে এমন একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে, যা কার্বন নির্গমনের প্রকৃত তথ্য দেবে না। বরং নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে কার্বন রয়েছে এমন তথ্য দেখাবে। সফটওয়্যারটি কোম্পানির পাসাত ও অডি এ৩ কম্প্যাক্ট মডেলের ডিজেল ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়।
এই কেলেঙ্কারির কবলে পড়েছে প্রায় ১১ মিলিয়ন গাড়ি। এতে গত এক বছরে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে কোম্পানিটি।
ডিজেল গাড়ি বিষাক্ত গ্যাস নাইট্রোজেন অক্সাইড নিঃসরন করে, যা এসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী। এছাড়া এ গ্যাস ফুসফুসে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট ও অকাল মৃত্যু ঘটায়।