শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে মুদ্রার দর ওঠানামা করছে কয়েক মাস ধরে। এতে পর্যটনশিল্প-নির্ভর দেশগুলোয় বিনিময় হারে বেশ প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে ডলারের বিপরীতে তুলনামূলক দুর্বল স্থানীয় মুদ্রাগুলোর অবমূল্যায়ন বেশি ঘটছে। এতে নেপালের মতো পর্যটননির্ভর দেশও বিপাকে পড়ছে। তবে দেশটির পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা সামনের দিনগুলোয় রুপির (স্থানীয় মুদ্রা) বিপরীতে ডলারের উত্থানে পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে আশাবাদী। খবর: দ্য হিমালয়ান টাইমস।
বিনিময় হার নিয়ে চিন্তিত না হওয়ার কারণ হিসেবে হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপালের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বিনায়ক শাহ বলেন, আমাদের বেশিরভাগ বিদেশি পর্যটক ভারতের নাগরিক। যেহেতু আমাদের মুদ্রার সঙ্গে ভারতীয় রুপির ঐতিহাসিক সাদৃশ্য রয়েছে, তাই ডলার শক্তিশালী হলেও পর্যটন খাতে এর গুরুতর প্রভাব পড়বে না বলে মনে করি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পর্যটকরা দামি ডলার খরচ করলেও নেপালে তাদের সংখ্যা বেশি নয় বলে জানান তিনি।
নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উড়োজাহাজে চড়ে গত মাসে ৪৬ হাজার ৯০০ পর্যটক বেড়াতে আসেন। তাদের মধ্যে আট হাজার ৩৫১ পর্যটক যুক্তরাষ্ট্রের ও চার হাজার ৭৮৭ পর্যটক ইউরোপের। এ সময় ভারত থেকে আসেন ২৩ হাজারের বেশি পর্যটক।
নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ রেট অনুযায়ী, প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১২৮ দশমিক ১১ রুপি। গতকাল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। চলতি বছর শুরুতে রুপির অবমূল্যায়ন হয় ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ, তখন ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ১১৯ দশমিক ২৪ রুপি। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, রুপির দুর্বল মান দ্রুত আরও মূল্যস্ফীতি বাড়াবে এবং আগামী দিনগুলোয় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়াবে।
অর্থনীতিবিদ ভিম ভার্টেল বলেন, ডলারের বিপরীতে রুপির মানের পতন নেপালের অর্থনীতির জন্য সুখকর হবে না, কেননা এতে মূল্যস্ফীতি লাফিয়ে বাড়বে এবং দারিদ্র্যের হারও বাড়াবে। প্রকৃতপক্ষে ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের অর্থ আমদানির ব্যয় বেড়ে যাওয়া। এতে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়বে দেশ, নাগরিকদের কেনাকাটায় ব্যাঘাত ঘটবে এবং অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ ম্যাক্রোইকোনমিক ডেটা অনুযায়ী, নেপালের বার্ষিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি এরই মধ্যে ছয় বছরের মধ্যে শীর্ষে (৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ) অবস্থান করছে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর আগে ২০১৬ সালের আগস্টে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ।
নেপালিজ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফএনসিসিআই) প্রেসিডেন্ট শেখর গোলছারের মতে, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের সুবিধা ও অসুবিধা দু-ই রয়েছে। আমাদের বাণিজ্য হয় মূলত ভারতের মুদ্রা ও ডলার দিয়ে। অর্থাৎ ডলার শক্তিশালী হলে আমদানির ব্যয় বেড়ে যায়, এতে লাভবান হন রপ্তারিকারকরা। তাদের সুবিধা দিতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয়। তবে আমাদের উৎপাদনব্যবস্থা বেশ দুর্বল এবং আমরা রপ্তানি সুবিধা কাজে লাগাতে পারব না। এতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
পাবলিক ডেট ম্যানেজমেন্ট অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বিনিময় হারের ওঠানামার কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এক হাজার ৯৪০ কোটি রুপির বিনিময়মূল্য হারিয়েছে নেপাল। চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ১১৮ দশমিক ৯৫ রুপি, যা ১৩ এপ্রিল বেড়ে হয় ১২২ দশমিক ১২ রুপি। এতে বিনিময় হারে ক্ষতি হয় ডলার প্রতি ৩ দশমিক ১৭ রুপি। এ হিসেবে চতুর্থ প্রান্তিকে ক্ষতির পরিমাণ তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় আরও বাড়বে। তবে ডলার শক্তিশালী হলে রেমিট্যান্স গ্রহীতারা উপকৃত হবেন বলে মনে করেন ভিম ভার্টেল। কেননা তারা ডলারের বিপরীতে তুলনামূলক বেশি রুপি পাবেন। সরকারও শুল্ক থেকে বেশি রাজস্ব পাবেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের পর্যটন খাত।