বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ নিন

‘বেইস টেক্সটাইল লিমিটেড: বিনিয়োগকারীদের ৩৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা উদ্যোক্তারা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। আমাদের প্রতিবেদক জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীর কালুরঘাট শিল্প এলাকার প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে বলে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ৩৫ কোটি টাকার বেশি তুলে নেয়। শ্রমিকদের বকেয়া বেতন রেখে এক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, আর উদ্যোক্তারা আড়ালে যান। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ আছে। বিএসইসি শেয়ারহোল্ডারদের ৩৫ কোটি টাকার শেয়ার বোনাস ইস্যু ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাধারণ মেয়াদের মাধ্যমে আরও ৩৫ কোটি টাকা মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন দেয়। উদ্যোক্তারা প্রায় ৩৫ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেন। কিন্তু পুঁজিবাজারে আর তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারীসহ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে লেনদেন করা ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। বিনিয়োগকারীরা পাঁচ বছরে এক টাকাও লভ্যাংশ পাননি। তাদের প্রশ্নÑএ ধরনের কোম্পানিকে কীভাবে কমিশন শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিল?

শেয়ারবাজার থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান অর্থ উত্তোলন করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে থাকে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পায়। নিশ্চয়ই বেইস টেক্সটাইল সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে।  তাহলে প্রতিষ্ঠানটির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কে ক্ষতিপূরণ দেবে! বেইস টেক্সটাইলের বেইস (ভিত্তি) যে এত নড়বড়ে তা তো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জানার কথা নয়। বাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের আগে প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগের বিষয়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে প্রচার চালায় এবং গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি-বিজ্ঞাপন দেয়।আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের বুঝেশুনে এবং গুজবে কান না দিয়ে বিনিয়োগের পরামর্শ দেয়। এখন বেইস টেক্সটাইল কর্তৃক যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কী বলবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা!

শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন স্বাভাবিক বিষয়। এটি সব দেশেই ঘটে থাকে। আমরা মনে করি, পুঁজিবাজারের প্রাণ সাধারণ বিনিয়োগকারী। তাদের সুরক্ষা এবং তাদের বাজারে ধরে রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। বেইসের উদ্যোক্তারা যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, এমন আগেও ঘটেছে। কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। শেয়ারবাজারে যেন কারসাজিকারী ও খেলোয়াড়রা প্রশ্রয় না পায়, সেজন্য সতর্ক হতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই।

অনেক কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয় না বা দিতে পারে না। কারও পূববর্তী বছরের তুলনায় লভ্যাংশ প্রদান কমে যায়; মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই নিম্নমানের ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে। এসব বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা শূন্য সহনশীলতায় কঠোর না হলে অনিয়ম ও দৌরাত্ম্য চলতেই থাকবে। দুষ্টচক্র চিহ্নিত না হলে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। কিন্তু যখন দুষ্টচক্র চিহ্নিত আছে, তখন কী ব্যবস্থা নেয় কমিশন! এ অবস্থায় কারও কারসাজিতে বিনিয়োগকারী পথে বসবে, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতাই প্রমাণ করে। আমরা আশা করি, বাজারের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০