Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:16 pm

বিনিয়োগকারীদের ৩৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা উদ্যোক্তারা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের কালুঘাটের পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান বেইস টেক্সটাইল লিমিটেড। ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হবে বলে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ৩৫ কোটি টাকার বেশি তুলে নেয়। শ্রমিকদের বকেয়া বেতন রেখে এক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। আর উদ্যোক্তারা আড়ালে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেইস টেক্সটাইলের ইস্যু ব্যবস্থাপনায় ছিল আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। তখন কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল ২০ কোটি টাকা। তখনকার বিদ্যামান শেয়ারহোল্ডারদের ৩৫ কোটি টাকার শেয়ার বোনাস ইস্যু ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাধারণ মেয়াদের মাধ্যমে আরও ৩৫ কোটি টাকা মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন দেয় কমিশন। ২০১৮ সালে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রিমিয়ামে শেয়ার বিক্রি করে বেইস টেক্সটাইলের উদ্যোক্তারা প্রায় ৩৫ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। কিন্তু পুঁজিবাজারের আর তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। এতে বিপাকে পড়ে বিনিয়োগকারীসহ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে লেনদেন থাকা ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। অথচ ২০১৭ সালে ডিসেম্বরের প্রতিষ্ঠানটির টার্নওভার ছিল ২০২ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংক ঋণ ছিল প্রায় ১০৫ কোটি টাকা। আর শেয়ারপ্রতি আয় ছিল চার টাকা ৪৪ পয়সা এবং শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য ছিল ৭৬ টাকা ২৪ পয়সা। অথচ কয়েক বছর পর তাদের ব্যবসায়ই বন্ধ হয়ে যায়।

চলতি বছরের রমজান মাসে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে বকেয়া বেতনের দাবিতে বেইস টেক্সটাইলে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছিল। পরে পুলিশ ও শ্রম আদালতের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তার মাধ্যমে বকেয়া আদায়ের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে। পরে কিছু বেতন দেয়া হলেও পুরোপুরি বেতন পরিশোধ করা হয়নি বলে জানান কারখানার পাশে অবস্থান করা লোকজন। এ কারখানার নিরাপত্তা কর্মী শফিকুল ইসলাম বলেন, কভিডের পর থেকে কারখানার অর্ডার ও কাজ কমে গিয়েছিল। আর ঈদের পর কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। আর মালিকরাও কারখানায় আসে না। এর বেশি কিছু জানতে চাইলে মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বিনিয়োগকারী মিজানুর রহমান বলেন, আমি ২০১৯ সালে বেইস টেক্সটাইলের ৮০ হাজার প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনি। কিন্তু এটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। গত ৫ বছরে এক টাকাও লভ্যাংশ পাইনি। প্রতিষ্ঠানটি বাজারের আসবে কি না, তাও জানি না। শুনেছি কারখানার কার্যক্রম বন্ধ। এ ধরনের কোম্পানিকে কীভাবে কমিশন শেয়ার বিক্রি অনুমোদন দিয়ে ছিল?

বেইস টেক্সটাইলের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক জামাল উদ্দিনের ছেলে তাহমিদ জামাল শেয়ার বিজকে বলেন, বেইস টেক্সটাইলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ আছে। তবে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো চালু আছে। আমাদের অনেক চেষ্টা ছিল কারখানা চালু রাখার। এর জন্য নতুন ফান্ড ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সবমিলিয়ে কারখানা বন্ধ আছে। এ বিষয়ে আমার আব্বার সঙ্গেও যোগাযোগ হয় না। অন্যদিকে প্লেসমেন্ট সেল করে অনেক টাকা নিয়েছেন। পরে আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। এতে বহু মানুষের বিনিয়োগ আটকে আছেÑএমন প্রশ্নের উত্তর কৌশলে এড়িয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি জানি না। এগুলো এমডি ও পরিচালকরা দেখতেন।