ডিএসইর সাপ্তাহিক চিত্র

বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থানে লেনদেন কমেছে পুঁজিবাজারে

শেখ আবু তালেব: টানা দুই সপ্তাহ কমল দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেন। বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থানে থেকে লেনদেন করছেন। এর ফলে কমেছে অধিকাংশ শেয়ার ও ইউনিটের বাজারদর। মিশ্র প্রবণতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া ডিএসইর সাপ্তাহিক লেনদেন চিত্র ও বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে বাজার মূল্য বৃদ্ধি পায় ১৬২টির, কমে ১৯৮টির, অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির ও লেনদেন হয়নি চারটির।

এই সময়ে ডিএসইর গুরুত্বপূর্ণ সূচক ডিএস৩০ কমে যায় আগের সপ্তাহের চেয়ে শূন্য দশমিক ৯৯ পয়েন্ট। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বৃদ্ধি পায় ২২ দশমিক ২৯ পয়েন্ট ও ডিএসইএস সূচক বৃদ্ধি পায় তিন দশমিক ৯৫ পয়েন্ট।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা মূলত বস্ত্র, ওষুধ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের প্রতি আগ্রহী ছিল। ২১টি খাতের মধ্যে মাত্র ৮টি খাত ছিল ইতিবাচক ধারায়। অবশিষ্ট খাতগুলোতে লোকসান দেখতে পেয়েছে আগের সপ্তাহের তুলনায় বিনিয়োগকারীরা।

বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ক্রমাগত ইতিবাচক ধারায় সূচকের উল্লম্ফনের পর এখন বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নিতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এ কাজটি করছে। ফলে বাজারের লেনদেন কমে গেছে। প্রাতিষ্ঠানিকদের সক্রিয়তায় ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থানে চলে  গেছেন। কাছে থাকা শেয়ার বিক্রি করে সমন্বয় করতে শুরু করেছেন, যার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন ও শেয়ারদরে।

মৌলভিত্তির কয়েকটি খাত ছাড়া অধিকাংশ খাতের কোম্পানির শেয়ার মূল্য কমে যায়। বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরা এখন একটু ধীরলয়ে এগোতে চাইছেন। ফলে নতুন কোনো শেয়ারের প্রতি ঝুঁকছেন না তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বাজারে প্রতিনিয়ত নতুন বিনিয়োগ এলে বাজারের সূচক বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বিনিয়োগ যে পর্যন্ত এসেছে, তাতে সূচক এর আশেপাশেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এখন নতুন বিনিয়োগ এলে শেয়ারের বাজার মূল্য ও সূচক বৃদ্ধি পাবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়েছে সরকার। পুঁজিবাজারের অবস্থান আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এখন এ খাতের দিকে নজর দিতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। যদি নতুন বিনিয়োগ আসে, তাহলে বাজার সামনের দিকে আরও এগিয়ে যেতে পারে।

গত সপ্তাহে আগের চেয়ে ডিএসইতে ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ লেনদেন কম হয়েছে। লেনদেন কম হলেও বাজার মূলধন কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গত সপ্তাহেই ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে দুই হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।

খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ মুনাফা দেখতে পান ভ্রমণ খাতের কোম্পানিতে। এ খাতে সর্বোচ্চ পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ মুনাফা আসে গত সপ্তাহে। এরপরই রয়েছে প্রকৌশল খাত পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ, সেবা খাত তিন দশমিক ৯ শতাংশ, বস্ত্র খাত তিন দশমিক আট শতাংশ ও সাধারণ বিমা খাত দুই শতাংশ। অন্যদিকে লোকসানে ছিল কাগজ, পাট, মিউচুয়াল ফান্ড, আইটি, সিরামিক, ব্যাংক, ট্যানারি, জ্বালানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।

ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেনে সর্বোচ্চ অবদান রাখে বস্ত্র খাত ১৪ দশমিক দুই শতাংশ, ওষুধ ১৩ দশমিক তিন শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১০ দশমিক তিন শতাংশ ও প্রকৌশল খাত ১০ শতাংশ।

একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শেয়ারের দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসে প্যাসিফিক ডেনিমস। কোম্পানিটির শেয়ারের দর বৃদ্ধি পায় সর্বোচ্চ ৩০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সপ্তাহ শেষে গড় শেয়ারদর বাড়ে ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

অন্যদিকে শেয়ারের দর হারানোর তালিকায় রয়েছেÑবাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ফাস্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড ও ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০