বিনিয়োগকারীর ২০৬ কোটি টাকা ৩ স্টকব্রোকারের পেটে

সায়েম উল্লাহ সবুজ: গ্রাহক বা বিনিয়োগকারীর সিসিএ (কনসলিডেটেড কাস্টমারস অ্যাকাউন্ট) হিসাব থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। উত্তোলন করা বিনিয়োগকারীর সেই অর্থ স্টক ব্রোকার আত্মসাৎ করেছেন। এমন অনিয়মের মাধ্যমে তিনটি স্টক ব্রোকার প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের প্রায় ২০৬ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। তিনটি প্রতিষ্ঠান হলোÑতামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও ফাস্টলিড সিকিউরিটিজ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তামহা সিকিউরিটিজ। এছাড়া বানকো প্রায় ৬৬ কোটি টাকা ও ফাস্টলিড প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তবে বিনিয়োগকারীর টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে উত্তোলন করে আত্মাসাৎ করলেও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কেবল অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক ও জরিমানা করে দায় সেরেছে। বাংলাদেশ মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

তামহা সিকিউরিটিজের আত্মসাৎ ১৩৯ দশমিক ৬৭ কোটি টাকা : সিজিএ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড ২০২০-২১ অর্থবছর গ্রাহকের সিসিএ হিসাব থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিনিয়োগকারীর ১৩৯ কোটি ৬৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৯৩ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানটি নিয়মবহির্ভূতভাবে দুটি ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকের এই অর্থ সরিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে সিডিবিএলে স্থাপিত ডিপিএ-৬ (ডিপজিটরি পার্টিসিপেন্ট অ্যাকাউন্ট) এবং ব্যাক অফিস সফটওয়্যারে ‘ইনস্ট্র–মেন্ট ওয়াইজ সিকিউরিটিজ মিসম্যাচ’ করে সিকিউরিটিজ পজিশন কম রাখার মাধ্যমে গ্রাহকের ৪৭ কোটি ১০ হাজার ৫৭ হাজার ৫৩৯ টাকা কৌশলে সরিয়ে নেয়। আবার সিসিএ হিসাব থেকে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর গ্রাহকের প্রাপ্য ৯২ কোটি ৫৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৫৪ টাকা ঘাটতি পাওয়া যায়। এই দুই খাতে বিনিয়োগকারীর মোট ১৩৯ কোটি ৬৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৯৩ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মূলত বিএসইসির নিয়মতি পরিদর্শন বা পরিবীক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ না করায় তদারকির ব্যর্থতার কারণে তামহা সিকিউরিটিজ বিনিয়োগকারীর এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করার সুযোগ পেয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সিজিএ বিএসইসিকে চিঠি দেয়। জবাবে বিএসইসি জানায়, ২০২২ সালের ১৪ মার্চ বিএসইসি তামহা সিকিউরিটি লিমিটেডের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। কমিশনের ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বরের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী মোট ১৩৯ কোটি ৬৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৯৩ টাকা ঘাটতি দেখা গেছে। ২০২২ সালের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৭০ বিনিয়োগকারীর পক্ষ থেকে ৩৯ কোটি ৯৯ লাখ সাত হাজার ৯৪৬ টাকা দাবি করা হয়েছে। ৬৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা পরিশোধে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে বাকি ৭৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা প্রদানের বিষয়ে বিএসইসি কোনো জবাব দেয়নি।

বানকো সিকিউরিটিজ আত্মসাৎ করেছে ৬৬ কোটি টাকা: সিজিএ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীর অর্থ হিসাব থেকে সরিয়ে আত্মসাৎ করার পরও বিএসইসি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেড আবার সিসিএ হিসাব থেকে ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ টাকা সরিয়ে আত্মসাৎ করেছে। বানকো প্রথমে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮ টাকা উত্তোলন করে। গ্রাহকের হিসাব থেকে অর্থ সরিয়ে নিলেও বিএসইসি ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বানকোকে কেবল সতর্ক করেছে। অভিযোগ রয়েছে, বানকো সতর্ক করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করায় স্টক ব্রোকারকে অনিয়মে উৎসাহ দিয়েছে বিএসইসি। কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় দ্বিতীয় দফায় বানকো বাকি টাকা সরিয়ে আত্মসাৎ করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিলের পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী সিসিএ হিসাবে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮ টাকার ঘাটতি পেয়েছে। কিন্তু বাকি টাকা আত্মসাতে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার জবাব দেয়া হয়নি।
অপরদিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিনিয়োগকারীর এক কোটি ২১ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৬ টাকা আত্মসাৎ করেছে ফাস্টলিড সিকিউরিটিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বনাথ শাখায় চার বিনিয়োগকারীর এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑমো. সিরাজুল হকের ১৫ লাখ ২৬ হাজার ৯০০ টাকা, নাসিমা বেগমের চার লাখ ৯২ হাজার, ডা. এমএ আহাদ ও ড. দিলশাদ পারভীনের এক কোটি এক লাখ ৪৭ হাজার ছয় টাকা।

বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড ট্রেডিং কর্তৃক নিয়মবহির্ভূতভাবে দুটি ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকের অর্থ সরিয়ে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডে (সিডিবিএল) স্থাপিত ডিপজিটরি পার্টিসিপেন্ট অ্যাকাউন্ট ছয় এবং ব্যাক অফিস সফটওয়্যারে করে সিকিউরিটিজ পজিশন কম রাখার মাধ্যমে তামহা সিকিউরিটিজ গ্রাহকের ৪৭ কোটি ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩৯ টাকা কৌশলে সরিয়ে নেয়। আবার সিসিএ (কনসলিডেটেড কাস্টমারস অ্যাকাউন্ট) হিসাবে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর গ্রাহকের প্রাপ্য ৯২ কোটি ৫৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৫৪ টাকা ঘাটতি পাওয়া যায়। বিএসইসি জবাব সিএজিকে জানায়, আইন ভঙ্গ করায় ফাস্টলিড সিকিউরিটিজকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসি মুখপাত্র ফারহানা ফারুকী জানান, বিষয়গুলো বিচারাধীন রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০