মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ : করোনাকালে দীর্ঘ ৬৬ দিন পর লেনদেন চালু হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। কিন্তু লেনদেন চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারী শূন্যতায় পড়েছে পুঁজিবাজার, যার জের ধরে লেনদেন নেমে এসেছে ৫০ কোটি টাকার নিচে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৪২ কোটি টাকার শেয়ার ইউনিট, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ লেনদেন। এর আগে ২০০৭ সালের ২৪ এপ্রিল গতকালের চেয়ে কম লেনদেন হয়েছিল। ওই দিন ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
বাজার খোলার পর গতকাল নিয়ে পুঁজিবাজারে মোট লেনদেন হয়েছে পাঁচ কার্যদিবস। এর মধ্যে কোনো দিনই ২০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হতে দেখা যায়নি। প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৪৩ কোটি টাকা। পরের কার্যদিবসে লেনদেন কিছুটা বেড়ে ১৯৭ কোটি টাকা হলেও পরের কার্যদিবস থেকে আবারও লেনদেন কমতে থাকে। এদিন অর্থাৎ তৃতীয় কার্যদিবসে লেনদেন হয় মোট ১৫৫ কোটি টাকার শেয়ার। পরের দিন লেনদেন হয় ১৫২ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট। তবে এদিন (চতুর্থ কার্যদিবস) ব্লক মার্কেটে রেনেটার শেয়ার বিক্রি হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকার। এছাড়া অন্য ১৮টি প্রতিষ্ঠানের চার কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। এই লেনদেন বাদ দিলে চতুর্থ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল মাত্র ৪৬ কোটি টাকা। গতকাল মোট লেনদেন অস্বাভাবিক কমে হয় ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্লক মার্কেটে লেনদেন হয়েছে ছয় কোটি টাকার শেয়ার।
এদিকে লেনদেন কমে যাওয়ার জন্য করোনাকে দায়ী করেন সংশ্লিষ্ট সবাই। কারণ ভাইরাসের কারণে বাজারে উপস্থিত হচ্ছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা নিজেদের নিরাপদে রাখতে চাচ্ছেন। ফলে লেনদেন কমে যাচ্ছে।
অন্যদিকে সূচক ঊর্ধ্বমুখী না হওয়ার কারণে যারা বাজারবিমুখ হয়ে আছেন তারাও বাজারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন না। ফলে বাজার তার স্বরূপে ফিরতে পারছে না। বন্ধ থাকার পর বাজার খোলা হলে মাত্র এক দিন সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এর পর টানা পতন দেখা যাচ্ছে। গতকালও ডিএসইর প্রধান সূচক কমে ১০ পয়েন্ট। দিন শেষে সূচকের অবস্থান হয় তিন হাজার ৯৫৩ পয়েন্টে।
এদিকে খাতভিত্তিক লেনদেনে চোখ রাখলে দেখা যায় গতকাল সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। যদিও এ খাতের বেক্সিমকো সিনথেটিক ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে দেখা যায়নি। পরের অবস্থানে ছিল প্রকৌশল খাত। স্বল্প লেনদেনের মধ্যেও এ খাতের শেয়ারে চোখ ছিল বিনিয়োগকারীদের। এছাড়া অন্য কোনো খাতের আধিপত্য তেমন একটা চোখে পড়েনি।
এদিকে গতকাল ডিএসইতে মোট ৩০৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১১টির বা তিন শতাংশের, শেয়ারদর কমেছে ৩৬টির বা ১২ শতাংশের এবং ২৬২টির বা ৮৫ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছ। মূলত ফ্লোর প্রাইস হিসাব করার কারণে সম্প্রতি শেয়ারদর অপরিবর্তিত থাকছে।
অন্যদিকে গত পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে গতকাল হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা ছিল আরও কম। হাউস কর্তৃপক্ষ মনে করছে, বাজার ভালো না থাকার কারণে যারা বাজারে আসতে চান তারাও আগ্রহ হারাচ্ছেন।