Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 9:43 am

বিনিয়োগযোগ্য পুঁজিবাজারেও আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বিনিয়োগযোগ্য অবস্থার বিবেচনায় বর্তমানে সেরা অবস্থানে রয়েছে পুঁজিবাজার। বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানির গড় পিই-রেশিও বা শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত অবস্থান করছে ১০-এর নিচে। এর আগে কখনও পিই-রেশিও ১০-এর নিচে নামেনি। এর পরও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে তালিকাভুক্ত কোম্পানির গড় শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত অবস্থান করছে ৯ দশমিক ৩১-তে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর তালিকাভুক্ত কোম্পানির গড় পিই-রেশিও ছিল ১৪ দশমিক ২৫। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে পিই-রেশিও কমেছে চার দশমিক ৯৪। এই বিবেচনায় আগের চেয়ে অনেক বেশি বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে রয়েছে পুঁজিবাজার।

অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে পুঁজিবাজার বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে রয়েছে, এ বিষয়ে মত দিয়েছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বহুদিন থেকেই পুঁজিবাজার বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে রয়েছে। আর গত অর্থবছরের বেশিরভাগ সময় বাজারে বড় বড় পতন থাকায় শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত অনেক কমে গেছে, যে কারণে আবার বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় এসেছে বাজার।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বহুদিন থেকেই বাজারের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে রয়েছে। বলতে গেলে বাজারে এখন অতিমূল্যায়িত কোম্পানিই নেই। অর্থাৎ গুটিকয়েক কোম্পানি ছাড়া সব শেয়ারই বিনিময়যোগযোগ্য অবস্থানে আছে। কিন্তু পতনের কারণে দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এরপর নতুন করে যোগ হয়েছে করেনাভাইরাস আতঙ্ক। এ কারণে বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে থেকেও বাজার তার স্বরূপে ফিরতে পারছে না।

এদিকে বর্তমানে বিনিয়োগযোগ্য অবস্থার শীর্ষে রয়েছে ব্যাংক খাত। বিদায়ী অর্থবছর (২০১৯-২০) এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত দাঁড়িয়েছে চার দশমিক ৩৪। এর আগে কখনও এই খাতের কোম্পানির গড় পিই-রেশিও ছয়ের নিচে নামেনি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের কোম্পানির পিই-রেশিও প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতের কোম্পানির পিই-রেশিও ছিল ৮ দশমিক ২৬। অর্থাৎ শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতের হিসাবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে রয়েছে এ খাত, যে কারণে সম্প্রতি এ খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত হচ্ছে ব্যাংক খাত। এ খাতের লভ্যাংশ প্রদানের হারও তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক। কিন্তু সার্বিক বাজার পরিস্থিতি ভালো না থাকায় দীর্ঘদিন থেকে এ খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার তার যোগ্য মূল্যে ফিরে যেতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শুধু ব্যাংকই নয়, এখন পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ শেয়ারই ক্রয়যোগ্য অবস্থানে রয়েছে। তবে তুলনামূলকভাবে ব্যাংকের শেয়ারদর অনেক কম। তবে যে কোনো খাত বিবেচনায় না নিয়ে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দেখেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত ১৫-এর নিচে থাকলে তাকে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ বলে অ্যাখায়িত করা হয়। এটি ২০-এর ওপরে গেলে ওই কোম্পানির শেয়ার ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর ৪০-এর ওপরে পিই-রেশিও গেলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ওই শেয়ারে মার্জিন সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বিবেচনায় ব্যাংকের পরের অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। বছর শেষে এ খাতের পিই-রেশিও দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫১-তে। আগের বছর ছিল ১৪ দশমিক ৭২। পরের অবস্থানে রয়েছে টেলিকমিউনিকেশন খাত। বছর শেষে এ খাতের পিই-রেশিও দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৯, এর আগের বছর যার যা ছিল ১৪ দশমিক ৫৯।

অন্যদিকে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পিই-রেশিও রয়েছে পাট খাতের কোম্পানির। অর্থবছর শেষে এই খাতের কোম্পানির পিই-রেশিও দাঁড়িয়েছে ৩২। যদিও বছরের ব্যবধানে এই খাতের সবচেয়ে বেশি কমেছে। আগের অর্থবছরে এ খাতের কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত গড়ে ছিল ৩০৬। অর্থাৎ তালিকাভুক্ত কোনো খাতের কোম্পানির গড় পিই-রেশিও ৪০-এর ওপরে নেই। সে বিবেচনায় সব খাতই এখন নিরাপদ।