বিনিয়োগসীমা পুনর্নির্ধারণেও আগ্রহ কম ব্যাংকের শেয়ারে

আতাউর রহমান: গত ৪ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ মেনে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকে বাজার মূল্য ধরে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করে একটি নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে জানানো হয়, ওই নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। দীর্ঘ ১১ বছর পর ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা নিয়ে সমস্যার সমাধানের পর বিষয়টি পুঁজিবাজারের সঙ্গে ব্যাংক খাতের শেয়ারেও ভালো প্রভাব ফেলবে বলে আশা করেছিলেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। এতে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে এবং শেয়ারের দামে আশানুরূপ মুনাফা হবে বলে আশাবাদী ছিলেন তারা। কারণ ক্রয়মূল্যে ব্যাংক সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্তই বিনিয়োগ করবে। এতে বাজার যেমন ভালো হবে, তেমনি শেয়ার দাম বাড়ার কারণে বিনিয়োগ থেকে ব্যাংকগুলোর ভালো মুনাফা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু গত ৪ সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, আলোচ্য খাতটির শেয়ারে যে আশা করা হয়েছিল, বিনিয়োগকারীদের সে রকম আগ্রহ বাড়েনি। এতে গত সপ্তাহগুলোতে ব্যাংক খাতে লেনদেন কিছুটা ভালো হলেও শেয়ারের দাম সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি। তবে বাজারে লেনদেন যদি ১৫০০ কোটি টাকা অব্যাহত থাকে এবং লেনদেন আরও বেড়ে ২০০০ কোটি টাকায় পৌঁছায় তাহলে খাতটির শেয়ারে আগ্রহ বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।   

২০১০ সালে পুঁজিবাজারে মহাধসের পর নানা সময় ব্যাংকে বিনিয়োগের সীমা বা এক্সপোজার লিমিট গণনা পদ্ধতি পাল্টানোর দাবি ছিল। কোনো শেয়ারের বাজার মূল্যের হিসাব করেই ব্যাংকের বিনিয়োগের সীমা নির্ধারণ করা হতো। এর ফলে শেয়ারের দর বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলো তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য থাকত। ফলে বাজারে শেয়ারের বিক্রয়চাপ তৈরি হতো। যে কারণে শেয়ারের ক্রয়মূল্য ধরে বিনিয়োগ সীমা (এক্সপোজার লিমিট) নির্ধারণের দাবি ছিল। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) এ সুপারিশ করে আসছিল। এ বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। পরে গত ১৮ জুলাই এক্সপোজার লিমিটের হিসাব পরিবর্তনে মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে ফিরতি চিঠিতে একটি কৌশলী মতামত দেয়া হয়। এতে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকেই বাজার মূল্য হিসেবে বিবেচনার মত দেয়া হয়। এর ফলে এক্সপোজার লিমিটের সংজ্ঞায় বাজারমূল্য থাকলেও কার্যত ক্রয়মূল্যতেই সেটি নির্ধারণের সুযোগ তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সেই মত মেনেই সিদ্ধান্ত জানায়।

গত ৪ সপ্তহের ব্যাংক খাত পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম সপ্তাহে বাজার উত্থানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এ সপ্তাহে সব খাতই ভালো অবস্থানে ছিল। আলোচ্য সপ্তাহে ব্যাংক খাতে মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ লেনদেন হয়। খাতটি লেনদেনে সপ্তম অবস্থানে ছিল। প্রথম সপ্তাহে ব্যাংক খাত লেনদেনে সপ্তম অবস্থানে থাকলেও আগ্রহের দিক থেকে খাতটি ছিল ১৪তম অবস্থানে। এ সপ্তাহে খাতটিতে শেয়ার দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। দ্বিতীয় সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ লেনদেন হয়ে অষ্টম অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাত। আলেচ্য সপ্তাহে বাজার পতনের মাধ্যমে লেনদেন শেষ হওয়ায় খাতটিতে শেয়ার দর কমেছে ২ দশমিক ১ শতাংশ। তৃতীয় সপ্তাহে ব্যাংক খাতে মোট লেনদেনের ৩ শতাংশ লেনদেন হয়। সপ্তাহটিতে বাজার ভালো অবস্থায় থাকলেও ব্যাংক খাতে শেয়ার দর দশমিক ০১ শতাংশ কমেছে। এবং সবশেষে গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৩ শতাংশ লেনদেন হয়ে ১৪তম অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাত। গত সপ্তাহে বাজার ভালো অবস্থানে থাকলেও আলোচ্য খাতটিতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম ছিল। যে কারণে খাতটিতে গত সপ্তাহে শেয়ার দর দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমার বিষয়টি সমাধান হলেও দেশের ব্যাংক খাতের অবস্থা নিয়ে সবাই চিন্তিত। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর ১০ ব্যাংককে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যাদের ভালো করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এ ব্যাংকগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছেÑতিনটি ব্যাংক। এছাড়া তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের সমস্যা, পরিচালনা পর্ষদে দ্বন্দ্ব, ব্যবসার অবস্থা ভালো না এ রকম নানা সমস্যা নিয়ে ভুগছে। যে কারণে ব্যাংক খাতের ওপরে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট রয়েছে। এর ফলে হাতেগোনা কয়েকটি ব্যাংক বাদে বেশির ভাগ ব্যাংকের ব্যবসা খারাপ হওয়ায় এবং বছর শেষে আশানুরূপ লভ্যাংশ না পাওয়ায় এ খাতটিতে বিনিয়োগের আগ্রহ কম বলে জানিয়েছেন তারা। তবে লভ্যাংশ বা অন্যান্য বিষয় ছাড়াও রয়েছে বাজারের লেনদেন কম হওয়ার কারণ। ব্যাংকের শেয়ার ও বাজার মূলধন অনেক। যে কারণে এ খাতের শেয়ারে আগ্রহ বাড়তে হলে প্রয়োজন অনেক লেনদেন। যা বাজারে কখনও অব্যাহত থাকে না। তবে গত কয়েকদিনের লেনদেন অনুসারে যদি লেনদেন এরকম অব্যাহত থাকে তাহলে শিগগিরই খাতটির শেয়ারে আগ্রহ বাড়বে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে এনসিসিবি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মনজুরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, বাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বাজার মূলধন ও শেয়ার সংখ্যা অনেক। ব্যাংকের শেয়ারের দাম ও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে যে পরিমাণ লেনদেন হওয়া প্রয়োজন সে পরিমাণ লেনদেন এ খাতটিতে হচ্ছে না। এ খাতের শেয়ারগুলোতে আগ্রহ বাড়াতে হলে অনেক বেশি লেনদেন হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে বাজারে যে ১৫০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে এ লেনদেন অব্যাহত থাকতে হবে। সে সঙ্গে লেনদেন বেড়ে ২০০০ কোটি টাকায় পৌঁছাতে হবে। যদি লেনদেন বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামী এক মাসের মধ্যে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০