Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 5:15 am

বিনিয়োগের মন্দা কাটাতে সচল বেজা

বাংলাদেশের সব বিভাগে অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এসব অঞ্চল। আজকের আয়োজন এর নানা দিক নিয়ে। গ্রন্থনা করেছেন রতন কুমার দাস

বাংলাদেশে বিনিয়োগের মন্দা কাটাতে সচেষ্ট রয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা। এজন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে কাজ করছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় অনেক

সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিশেষ করে বিনিয়োগ অবকাঠামো, ইউটিলিটি সার্ভিস, অন্যান্য সেবা ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস পেতে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে মোংলা, মীরসরাই ও শ্রীহট্ট অঞ্চল বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। এসব এলাকার অনেক জমি শিল্পায়নের জন্য দেওয়া হয়েছে।

বিনিয়োগের জন্য সমন্বিত অবকাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করছে বেজা। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পকারখানা নির্মাণের জন্য সর্বাধুনিক ব্যবস্থাপনায় ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। মোংলা, মীরসরাই ও শ্রীহট্ট অঞ্চলের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি অঞ্চলের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি। এসব অঞ্চলে চীন, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের জন্য আহ্বান করছে বেজা।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত জমি কিংবা দূরের চর এলাকার জমি উন্নয়ন করেছে বেজা। সংস্থাটি জানিয়েছে, ৯০ শতাংশ জমিই এমন। এর বাইরে পাঁচ শতাংশের মতো জায়গা রয়েছে বেসরকারি অঞ্চলের। বাকি পাঁচ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সংগত কারণে বলা যায়, বেজা কারও জন্য হুমকিস্বরূপ নয়। সংস্থাটি সফলভাবে কৃষিজমিকে এড়িয়ে বিশাল ল্যান্ড ব্যাংক গড়ে তুলেছে।

অনুমোদিত অর্থনৈতিক অঞ্চল

২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু করতে চায় বেজা। এসব অঞ্চলে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ লক্ষ্যে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে ৮৮টি।

এক নজরে দেখে নেওয়া যেতে পারে অনুমোদিত কয়েকটি অঞ্চলের তালিকা

সরকারি

আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চল (আনোয়ারা), চট্টগ্রাম; আনোয়ারা-২ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সিইআইজেড), (আনোয়ারা), চট্টগ্রাম; মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল (মিরসরাই), চট্টগ্রাম; শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল (মৌলভীবাজার সদর), মৌলভীবাজার; মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল (মোংলা), বাগেরহাট; শ্রীপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীপুর (গাজীপুর); সাবরং ট্যুরিজম এসইজেড (টেকনাফ), কক্সবাজার; ঢাকা এসইজেড (কেরানীগঞ্জ), ঢাকা; জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর সদর; নারায়ণগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বন্দর ও সোনারগাঁও); ভোলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, ভোলা সদর; আশুগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল (আশুগঞ্জ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া; পঞ্চগড় অর্থনৈতিক অঞ্চল (দেবীগঞ্জ), পঞ্চগড়; নরসিংদী অর্থনৈতিক অঞ্চল, নরসিংদী সদর; নীলফামারী অর্থনৈতিক অঞ্চল, নীলফামারী সদর; কুষ্টিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (ভেড়ামারা), কুষ্টিয়া; আগৈলঝরা অর্থনৈতিক অঞ্চল (আগৈলঝড়া), বরিশাল; মানিকগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল (শিবালয়), মানিকগঞ্জ; ঢাকা অর্থনৈতিক অঞ্চল (দোহার), ঢাকা; হবিগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল (চুনারুঘাট), হবিগঞ্জ; শরিয়তপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল (জাজিরা ও গোসাইরঘাট), শরিয়তপুর; নাফ ট্যুরিজম এসইজেড (টেকনাফ), কক্সবাজার; কক্সবাজার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (মহেশখালী), কক্সবাজার; মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল ১, ২, ৩ ও ৪ (মহেশখালী), কক্সবাজার; নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল (লালপুর), নাটোর; গোপালগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল (কোটালিপাড়া), গোপালগঞ্জ; গোপালগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল ২, গোপালগঞ্জ সদর; আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চল (আড়াইহাজার), নারায়ণগঞ্জ; রাজশাহী অর্থনৈতিক অঞ্চল (পুটিয়া), রাজশাহী; শেরপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, শেরপুর সদর; ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল (সোনাগাজী), ফেনী; মোংলা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (মোংলা), বাগেরহাট; পটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (পটিয়া), চট্টগ্রাম; সুন্দরবন ট্যুরিজম পার্ক (শরণখোলা), বাগেরহাট; বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (শাহজাহানপুর), বগুড়া; খুলনা অর্থনৈতিক অঞ্চল ১ ও ২ (বটিয়াঘাটা ও তেরখাদা); সিলেট বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (গোয়াইনঘাট), সিলেট; কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চল, কুড়িগ্রাম সদর; নেত্রকোনা অর্থনৈতিক অঞ্চল, নেত্রকোনা সদর; ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ময়মনসিংহ সদর ও ঈশ্বরগঞ্জ); আলুটিলা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (খাগড়াছড়ি সদর ও মাটিরাঙ্গা); রামপাল অর্থনৈতিক অঞ্চল (রামপাল), বাগেরহাট; গজারিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (গজারিয়া), মুন্সীগঞ্জ

বেসরকারি

এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল (পলাশ), নরসিংদী; আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল (গজারিয়া), মুন্সীগঞ্জ; ‘গার্মেন্ট শিল্প পার্ক’ বিজিএমইএ (গজারিয়া), মুন্সীগঞ্জ; মেঘনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চল (সোনারগাঁও), নারায়ণগঞ্জ; মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল (সোনারগাঁও), নারায়ণগঞ্জ; ফামকাম অর্থনৈতিক অঞ্চল (রামপাল), বাগেরহাট; কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল (মেঘনা), কুমিল্লা; আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল (সোনারগাঁও), নারায়ণগঞ্জ; বে অর্থনৈতিক অঞ্চল (কোনাবাড়ী), গাজীপুর; সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সিরাজগঞ্জ সদর ও বেলকুঁচি); অ্যালায়েন্স অর্থনৈতিক অঞ্চল (দাউদকান্দি), কুমিল্লা; আরিশা অর্থনৈতিক অঞ্চল (সাভার ও কেরানীগঞ্জ), ঢাকা; ইউনাইটেড আইটি পার্ক লিমিটেড (ভাটারা, বাড্ডা), ঢাকা; ইস্ট কোস্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল (বাহুবল), হবিগঞ্জ; বসুন্ধরা অর্থনৈতিক অঞ্চল (কেরানীগঞ্জ), ঢাকা; ইস্ট-ওয়েষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল (কেরানীগঞ্জ), ঢাকা; সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চল (রূপগঞ্জ), নারায়ণগঞ্জ; সিটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ডেমরা), ঢাকা; আকিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ত্রিশাল), ময়মনসিংহ

আমদানি, রফতানি, স্থানীয় বাজারে বিক্রি, স্থানীয় ক্রয়াদেশ, স্যাম্পল, সাব-কন্ট্রাক্ট, ইউটিলিটি কানেকশন, অফ-শোর ব্যাংকিং লাইসেন্সের এনওসি, লাইসেন্স, এসটিপি, সিইটিপি, জেনারেটর স্থাপন, ভ্যাট ও টিআইন নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, ভবন কাঠামো অনুমোদন, পরিবেশ-সংক্রান্ত অনুমোদন, কাস্টমস অনুমোদনসহ সব ধরনের অনুমোদন একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরবরাহ করা হবে।

বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র

পর্যটনশিল্প বিশ্বে একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে বিবেচিত। শুরুতেই তাই বলে রাখা যায়, পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে বদলে যেতে পারে একটি দেশ। কর্মসংস্থানের বিচারে পর্যটনশিল্প তুলনামূলক এগিয়ে রয়েছে। এ চিত্র বিশ্বের প্রায় সব দেশের। অনেক দেশ অন্য যে কোনো বড় শিল্পের চেয়ে পর্যটনশিল্প থেকে বেশি আয় করে থাকে। এ খাতে এমন সম্ভাবনাময় বাজার আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা।

এক জরিপে দেখা গেছে, শুধু শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠাই নয়, বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন এলাকাও। এরই মধ্যে কয়েকটি স্থানকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বেজা।

সাবরং

কক্সবাজারের সাবরংয়ে এমন উদ্যোগ নিয়েছে বেজা। এখানকার এক হাজার ২৭ একর এলাকায় বহুমাত্রিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। নির্মল বায়ু, পাহাড় ও সমুদ্রের সম্মিলনে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হবে অঞ্চলটি। এর আলোকসজ্জায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য টেকনাফ সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুতায়ন করা হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের কাছাকাছি হুয়াকং এলাকায় ২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলেও কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে। এ পর্যটন এলাকায় থাকছে হোটেল কমপ্লেক্স, বিনোদন ব্যবস্থা, বাণিজ্যিক পর্যটন, থিম পার্ক, মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম, ওয়াটার স্পোর্টস, ওয়াটার টুরিজম, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট আধুনিক বিনোদন প্রভৃতি। এখানে ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

নাফ ট্যুরিজম পার্ক

প্রকৃতির সৌন্দর্যকে লাভজনক সেবায় বিনিয়োগের চেষ্টা করছে বেজা। এজন্য পর্যটনের আরেকটি প্রকল্প গড়ে তোলা হবে কক্সবাজারে। এর নাম দেওয়া হয়েছে নাফ ট্যুরিজম পার্ক (জালিয়ারদিপ)। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী নাফ নদীর কোলঘেঁষে এক্সক্লুসিভ টুরিজম পার্কটিও বিপুল সম্ভাবনায়। নাফ নদীর মধ্যে প্রায় ২৭১ একর আয়তনের একটি দ্বীপকে এ প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন করা হচ্ছে। টেকনাফ শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। টেকনাফ সাবস্টেশনের ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান তিন কিলোমিটার দূরে। তবে বিদ্যুৎ সংযোগে কোনো বিভ্রাট হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া পর্যটন কেন্দ্রের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে আরেকটি ২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব রাখা রয়েছে। এ ট্যুরিজম পার্কের আওতায় থাকছে হোটেল কমপ্লেক্স, ইকো-টুরিজম, বিনোদন ভ্রমণ, বাণিজ্যিক পর্যটন, খেলাধুলা, জলবিনোদন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের নানা সুবিধা। এখানে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

সোনাদিয়া ট্যুরিজম পার্ক

মহেশখালীতে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য ৯ হাজার ৪৬৭ একর জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পরিবেশের ক্ষতি না করে এখানে বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।

সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এ দেশে পর্যটনশিল্পের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এটি একটি বহুমাত্রিক ও শ্রমঘন শিল্প। বেজার এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পর্যটকদের পদচারণে মুখর হবে অঞ্চলগুলো। তাদের আকৃষ্ট করতে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। স্বল্পমূল্যে বিনোদনের সুবিধাসহ থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার ওপর জোর দিতে হবে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে সাবরং, নাফ ট্যুরিজম ও সোনাদিয়া ট্যুরিজম পার্ক।

উল্লিখিত স্থানগুলোর পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, নঁওগা প্রভৃতি জেলায় পর্যটনশিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ।

অগ্রগতি

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজার হিসাব অনুযায়ী,

#  ৮৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন পেয়েছে

# এর মধ্যে রয়েছে ৫৫টি সরকারি, ২৯টি বেসরকারি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে দুটি ও দুটি ট্যুরিজম পার্ক

#  সব অঞ্চলে বিলিয়ন ডলারের দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে

#  কয়েকটি অঞ্চলে উৎপাদন শুরু হয়েছে

#  অনলাইনে বিনিয়োগকারীদের নানা সেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে

#  জাপানের বিখ্যাত হোন্ডা, সুমিতমো করপোরেশন, অস্ট্রেলিয়ার টিআইসিসহ অনেক বড় প্রতিষ্ঠান কাজ করছে

#  ভারত, চীন ও জাপানের ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কাজে হাত দেওয়া হয়েছে

#  এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে

#  ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু করতে চায় বেজা। এসব অঞ্চলে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে, রফতানি আয়ের লক্ষ্য ৪০ বিলিয়ন ডলার।

উল্লিখিত অগ্রগতি বিদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশকে যেমন আকর্ষণীয় করে তুলেছে, তেমনি দেশের ব্যবসায়ীদের মনেও আশা জাগাচ্ছে।

নজর দিতে হবে কয়েকটি বিষয়ে

পরিকল্পিত শিল্পায়ন ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আশার আলো জাগিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা। তবে কয়েকটি বিষয়ে এখনও সঠিক মনোযোগ দিতে পারেনি সংস্থাটি।

পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। তবে এসব এলাকায় অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বেজার সফলতা এখনও সীমিত পর্যায়ে।

নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, শেরপুর ও জামালপুরে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তেমন অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। একই কথা প্রযোজ্য বরিশাল বিভাগের বেলায়ও। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

প্রবাসীদের বিনিয়োগও আশাব্যঞ্জক নয়। সরকারি, বেসরকারি, জিটুজি ও পিপিপির ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে বেজা। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও গ্রুপ বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দ্বারা এখন পর্যন্ত কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল করার খবর পাওয়া যায়নি। প্রবাসীদের ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি রয়েছেÑবিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণেও তাদের সম্পৃক্ত করলে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে।

কর্তৃপক্ষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসংশ্লিষ্ট ভূমি এলাকাকে নানা ভাগে বিভাজন করে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করবে এমন বিধিবিধান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে

ক. রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা: রফতানিমুখী শিল্পের জন্য নির্ধারিত

খ. অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকরণ এলাকা: দেশীয় বাজার চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত শিল্পের জন্য নির্ধারিত

গ. বাণিজ্যিক এলাকা: ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, ওয়্যার হাউজ, অফিস বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত

ঘ. প্রক্রিয়াকরণমুক্ত এলাকা: আবাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিনোদন প্রভৃতির জন্য নির্ধারিত

ওপরে উল্লেখ করা ধরন অনুযায়ী সব অঞ্চলকে বিভাজন করা হয়নি। অর্থাৎ ভবিষ্যতে হযবরল অবস্থা তৈরি হতে পারে।

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের অভ্যন্তর বা অর্থনৈতিক অঞ্চল-বহির্ভূত স্থানে পশ্চাৎসংযোগ শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। সরকারের অনেক বিভাগ দক্ষ শ্রমিক তৈরির কাজ করছে। বেজার এমন উদ্যোগ চোখে পড়েছে কি?

শ্রমিক ও কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে সুষ্ঠু সম্পর্ক থাকা উচিত। অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদনের কাজে হাজারো শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য শ্রম বিধিমালা আজও তৈরি করতে পারেনি বেজা। কেউ কেউ বলে থাকেন, শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বেজার উদাসীনতা রয়েছে। এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। এমনকি শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বেজায় দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন রয়েছে।

পরিশেষে আরও একটি বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। বেজার সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় রাজধানীর প্রধান কার্যালয় থেকে। অর্থাৎ বিকেন্দ্রীকরণ হয়নি। অথচ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু সারা দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, তাই বেজার বিকেন্দ্রীকরণ অতীব জরুরি। রাজধানীসহ অন্য বিভাগে আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলে কাজে গতি বাড়বে, সার্বক্ষণিক নজরদারি করা যাবে। একই সঙ্গে অনাকাক্সিক্ষত উদ্ভূত পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার

দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে সেবা দিয়ে আসছে বেজা। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে এ সেবা ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার (ওএসএসসি)। সহযোগিতা করেছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

আগামী জুনের মধ্যে ১২৫টি সেবা ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের আওতায় আসবে। এগুলোর মধ্যে বেজা নিজে দেবে ৩৭টি সেবা। সরকারের অন্যান্য দফতর দেবে ৮৮টি সেবা। এর মধ্যে থাকছে:

#  বিনিয়োগকারীদের ভিসা সুপারিশপত্র

#  বিনিয়োগ ছাড়পত্র

#  ওয়ার্ক পারমিট

#  আমদানি অনুমোদন

#  রফতানি অনুমোদন

#  প্রকল্প অনুমোদন

#  প্রকল্প নিবন্ধন

#  স্থানীয় বিক্রিতে অনুমতি

#  স্থানীয় কেনার অনুমতি

#  নমুনা আমদানি অনুমতি

কোন সেবা কত দিনে

#  ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত পাঁচ ধরনের অনুমোদন মিলবে সাত থেকে ৩০ দিনে

#  বিদ্যুৎ-সংযোগ সংক্রান্ত তিনটি অনুমোদন পাওয়া যাবে সাত থেকে ১৪ দিনে

#  কারখানা বন্ড লাইসেন্স ২২ দিনে

#  গ্যাস-সংযোগ সাত দিনে

#  বিস্ফোরক লাইসেন্স ২১ দিনে

#  জমির নামজারি ১৫ দিনে

#  পরিবেশ ছাড়পত্র সাত থেকে ৩০ দিনে