নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন বছরের শুরু থেকে ইতিবাচক ধারায় লেনদেন হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে। সদ্যসমাপ্ত সপ্তাহেও তা প্রত্যক্ষ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৮ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বা বা এক দশমিক তিন শতাংশ বেড়েছে। বিনিয়োগকারীদের অংশ বেড়ে যাওয়ায় গড় লেনদেন বেড়েছে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ। বাজার মূলধনও বেড়েছে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা। ফলে নতুন বছরের প্রথম তিন সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ল ২৩ হাজার কোটি টাকার ওপর।
সাপ্তাহিক লেনদেন বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহজুড়ে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার প্রবণতা লেনদেনসহ ডিএসইর সব ইনডিকেটর ঊর্ধ্বমুখী রাখে। বেক্সিমকো, এসিআই, বিএসআরএম ও ব্র্যাক ব্যাংকের মতো বেশ কয়েকটি বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন ও দরবৃদ্ধি বাজারের ঊর্ধ্বমুখী গতি বজায় রাখতে সহযোগিতা করেছে। বাজারের ইতিবাচক পরিস্থিতি বিবেচনায় মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতাও লক্ষ করা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহজুড়ে বেশিরভাগ খাতে ইতিবাচক ধারায় লেনদেন হয়েছে। তবে বিবিধ, বস্ত্র, ওষুধ ও রসায়ন খাতে বেশি সক্রিয় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেড, অ্যাডভান্স কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (এসিআই) লিমিটেড ও বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) লিমিটেডের শেয়ার।
আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে আট হাজার ২৪৩ কোটি ১৯ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার। আগের সপ্তাহে এটি ছিল সাত হাজার ৮৩২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ৪১০ কোটি ৭৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বা পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে।
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে বিবিধ খাত। মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক আট শতাংশই এ খাতের। বস্ত্র খাতে ১১ শতাংশ লেনদেনের মাধ্যমে দ্বিতীয় ও ওষুধ খাতে ১০ দশমিক ছয় শতাংশ লেনদেন করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। লেনদেনে পরের স্থানে থাকা খাতগুলোর অবদান যথাক্রমে প্রকৌশল ৯ দশমিক চার, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ আট দশমিক ছয়, জীবন বিমা ছয়, খাদ্য পাঁচ দশমিক ৯ ও ট্যানারি পাঁচ দশমিক এক শতাংশ অবদান রাখে। বাকি খাতগুলোর লেনদেন পাঁচ শতাংশের নিচে ছিল।
একক কোম্পানি হিসেবে লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির চার কোটি ৬১ লাখ ২৭ হাজার ৯৩১টি শেয়ার হাতবদলের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৬৯৬ কোটি ২৪ লাখ ১৬ হাজার টাকার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন লিমিটেড (বিএসসি)। কোম্পানিটির দুই কোটি ৮১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৪৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজারমূল্য ৩৮৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা ফরচুন শুজ লিমিটেডের দুই কোটি ৮৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৯২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজারমূল্য ৩৬৯ কোটি ৯৬ লাখ হাজার টাকা।
লেনদেনে পরের স্থানে থাকা কোম্পানিগুলো হলো সাইফ পাওয়ারটেক, জিপিএইচ ইস্পাত, পাওয়ার গ্রিড, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, আর.একে সিরামিকস, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড।
লেনদেনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত সপ্তাহে সূচকের উত্থান দেখা গেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহের ব্যবধানে ৮৮ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বা এক দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে সাত হাজার ১০৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাজার মূলধনের শীর্ষ ৩০ কোম্পানির মূল্যসূচক ডিএস৩০ আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৯ দশমিক শূন্য আট পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে দুই হাজার ৬৩৫ পয়েন্টে উঠেছে। অন্যদিকে ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচক ছয় দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।
সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বেক্সিমকোর শেয়ার। গত সপ্তাহে সূচকটিতে বিবিধ খাতের কোম্পানিটি ২৮ দশমিক তিন পয়েন্ট যোগ করেছে। এরপর রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই। সূচকে কোম্পানিটির সাত পয়েন্ট যোগ হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বিএসআরএম যোগ করেছে পাঁচ দশমিক সাত পয়েন্ট। এছাড়া সূচকটির উত্থানে অবদান রাখা শীর্ষ অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক চার দশমিক ছয় পয়েন্ট, লিন্ডে বাংলাদেশ চার পয়েন্ট, বিএসসি তিন দশমিক ৯ পয়েন্ট ও ওরিয়ন ফার্মা তিন দশমিক আট পয়েন্ট করে যোগ করেছে।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে ৩৯০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনাবেচা হয়। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২২৪টির ও কমেছে ১৩৯টির। আর দামের পরিবর্তন হয়নি ২৩টির।
এদিকে সাপ্তাহিক রিটার্নে সমান ১০টি করে খাতে দর বেড়েছে ও কমেছে। সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক তিন শতাংশ দর বেড়েছে ভ্রমণ-অবকাশ খাতে। সেবা ও আবাসন খাতে আট দশমিক আট শতাংশ এবং বস্ত্র খাতে পাঁচ দশমিক চার শতাংশ দর বেড়ে তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল। এছাড়া বিবিধ খাতে চার দশমিক আট, ট্যানারি খাতে দুই দশমিক ছয়, জীবন বিমা খাতে এক দশমিক ৯, ফার্মা খাতে এক দশমিক সাত, পাট খাতে দশমিক চার, খাদ্য ও ব্যাংক খাতে দশমিক তিন শতাংশ করে দর বেড়েছে। অন্যদিকে দর কমেছে সিমেন্ট, সিরামিক, টেলিযোগাযোগ, আইটি, প্রকৌশল, কাগজ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, আর্থিক খাত, মিউচুয়াল ফান্ড ও সাধারণ বিমা খাতে।
এদিকে এক কোম্পানি হিসেবে দর বাড়ার শীর্ষে রয়েছে ফার্মা এইডস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটির দর ২৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১৪ কোটি ২৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটি মোট ৭১ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা লেনদেন করে। এছাড়া গেইনারের তালিকায় এরপর রয়েছে যথাক্রমে ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড, গ্লোবাল হেভী কেমিক্যাল লিমিটেড, শমরিতা হসপিটাল, দেশ গার্মেন্ট, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইয়াকিন পলিমার, ওরিয়ন ইনফিউশন, জেমিনি সি ফুড ও এসিআই ফরমুলেশন লিমিটেড।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে ডিএসইতে বাজার মূলধনেও ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে ২৩৮ কোটি ২৬ লাখ ৯৯ হাজার ৮০৫ টাকা বা দশমিক শূন্য চার শতাংশ বাজার মূলধন বেড়েছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৬ কোটি ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকায়। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার টাকায়।