মো. আসাদুজ্জামান নূর: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল মূল্যসূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার দিন কমেছে সূচক। তবে গতকাল টাকার অঙ্কে লেনদেন বেড়েছে।
দুটি ইস্যুতে এ সপ্তাহে পুঁজিবাজার এমনটা দেখা গেছে। বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড সংক্রমণ হার বাড়ায় সতর্ক অবস্থানে চলে গেছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া পুঁজিবাজারে চলছে বিভিন্ন কোম্পানির দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের মৌসুম। গত বছর জুনে যেসব কোম্পানির অর্থবছর শেষ হয়েছে, সেসব কোম্পানি তাদের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ করছে, আর ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কোম্পানিগুলো চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে লভ্যাংশ ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানাবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক চিত্র উঠে আসে এসব প্রান্তিক প্রতিবেদনে। এর ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নেন, কোনো কোম্পানিতে নতুন বিনিয়োগ করবেন কি করবেন না। ফলে এ দুটি বিষয়ের ওপর ঝুলে রয়েছে বিনিয়োগ।
সমাপ্ত সপ্তাহজুড়ে বাজারে বিক্রির চাপ লক্ষ করা গেছে। গতকালও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রিতে চাপ বেশি থাকলেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ১০৩ কোটি টাকা। এদিন লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।
ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে থাকা বিবিধ খাতকে সরিয়ে গতকালের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বস্ত্র খাত। এ খাতে ১৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ লেনদেন হয়। এরপর ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ লেনদেন হয়েছে বিবিধ খাতে। লেনদেনে ওপরের দিকে থাকা অন্য খাতগুলোর অবদান যথাক্রমে প্রকৌশল ৯ দশমিক ৫২, ওষুধ ও রসায়ন ৯ দশমিক ১৯, খাদ্য আট দশমিক ১০, সাধারণ বিমা সাত দশমিক ১২ এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ছয় দশমিক ৫০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতের লেনদেন পাঁচ শতাংশের নিচে ছিল।
গতকাল শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির চেয়ে শেয়ারদর পতন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা ছিল বেশি। লেনদেনে ১৪২টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। কমেছে ১৮৪টি কোম্পানির। দর আগের দিনের মতোই ছিল ৫৫টি কোম্পানির।
গতকাল লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ৭৭ শতাংশ দর বেড়েছে জীবন বিমা খাতের। এ ছাড়া সাধারণ বিমা খাতের ২৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। আগের দিন নন ব্যাংক আর্থিক খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লেও গতকাল সে ধারা থেকে বেরিয়ে গেছে। লেনদেনে এ খাতের ৩২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। এছাড়া গতকাল ওষুধ, বিমা, আইটি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে বেশি দর পতন দেখা গেছে।
শেষ কার্যদিবসে গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএইএক্স কমেছে ৪ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। সূচক দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৭ পয়েন্টে। ফলে সপ্তাহের চার দিনই কমেছে প্রধান এই সূচক। সপ্তাহের শুরুর দিন রোববার সূচক কমেছিল ৩২ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট। সোমবার সূচক কমেছে ৫৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট। মঙ্গলবার সূচক বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩২ পয়েন্ট। বুধবার কমেছে দশমিক ১৩ পয়েন্ট।
গতকাল লেনদেনে গ্রামীণফোনের শেয়ারদর এক দশমিক ১৩ শতাংশ পতনে সূচক কমছে সবচেয়ে বেশি আট দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। এ ছাড়া বিকনফার্মার চার দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ারদর কমায় সূচক কমেছে ৪ দশমিক ১৫ পয়েন্ট। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ারদর ২ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট কমেছে, কোম্পানির শেয়ারদর দশমিক ৪৪ শতাংশ কমায়। বার্জার পেইন্টসের শেয়ারদরের কারণে সূচক এক দশমিক ৪৬ পয়েন্ট কমেছে। পাওয়ার গ্রিডের শেয়ারদর এক দশমিক ৬৮ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে এক দশমিক ৩৪ পয়েন্ট।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার এক দশমিক শূন্য এক পয়েন্ট, স্কয়ার টেক্সটাইলের শূন্য দশমিক ৯৯ পয়েন্ট, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির শূন্য দশমিক ৯১ পয়েন্ট, হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শূন্য দশমিক ৮৫ পয়েন্ট ও বিএসআরএম স্টিলের এক দশমিক ৭৮ শতাংশ কমেছে। এদিন সার্বিকভাবে সূচক কমেছে দশমিক ৮২ পয়েন্ট।
যেসব কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আইসিবি, ন্যাশনাল লাইফ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইউনিলিভার কনজ্যুমার, বেক্সিমকো ফার্মা, আরএকে সিরামিক, তিতাস গ্যাস, বেক্সিমকো লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক ও ফারইস্ট লাইফ।