নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থাকে সংগঠিত করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) নেতারা। এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন সংশ্লিষ্টজনরা। বুধবার ‘কভিড-১৯ প্যানডেমিক: ইমপ্যাক্ট অন ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করে বিএপিএলসি। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিডার সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম, বিএসইসির অধ্যাপক শিবলী রৌবায়েত-উল-ইসলাম। আলোচক ছিলেন এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির। বিএপিএলসির সভাপতি আজম জে চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সহসভাপতি রিয়াদ মাহমুদের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য রাখেন ইস্ট কোস্ট গ্রুপের পরিচালক তানজিম চৌধুরী।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য বাণিজ্য সংস্থাগুলোর নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাণিজ্য সংস্থাগুলো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব একটি নতুন বিশ্বাসের জš§ দিয়েছে এবং স্টেকহোল্ডারদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে মহামারির মধ্যেও দেশের ব্যবসায়িক কার্যক্রমসহ অনান্য সব জরুরি কাজ সফল ও সুষ্ঠুভাবে চালু রাখা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোভাবের কারণেই সমাজের উঁচু স্তরের মানুষের মানসিকতায় অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে। আজকের সেমিনারে উপস্থিত সব বাণিজ্য সংস্থার করপোরেট গভর্ন্যান্সে সহায়তা করা উচিত। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কর ভিত্তির প্রসারণ এ প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করতে পারে।
তিনি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সহযোগিতা, অভ্যন্তরীণ শিল্পকে রক্ষা করতে মূসক ও কর ব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং দ্বিপক্ষীয় বাজারে বিনা মূল্যে প্রবেশাধিকারের জন্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এফবিসিসিআই হেল্পডেস্ক এবং হেল্পলাইনগুলো নির্দিষ্ট কিছু চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে এবং আমরা স্ব স্ব মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করে আসছি। যেমন চা শিল্পের জন্য মাত্রাতিরিক্ত করে যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়টি আমরা চিহ্নিত করেছি। গুরুত্বপূর্ণ কোন ইস্যু কিংবা নিয়ন্ত্রণ সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে যে কোনো সমস্যা সমাধানে বিএপিএলসিকে সহযোগিতা করতে পারলে তা এফবিসিসিআইয়ের জন্য আনন্দের হবে।
তিনি বলেন, দেশে এমএসএমইএস খাত থেকে শুরু করে বৃহত্তম সেক্টরে বাংলাদেশের বাণিজ্য সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি হিসাবে আমরা কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল (সিডব্লিউইআইসি), চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি), সিল্ক রোড চেম্বার অব ইন্টারন্যাশনাল কমার্সসহ (এসআরসিআইসি) ১২৯টি স্ট্র্যাটেজিক গ্লোবাল পার্টনারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
তিনি এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং এসডিজি ২০৩০-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন যন্ত্রের যথাযথ ব্যবহার, প্রকল্পের সম্ভাব্যতার বিপরীতে উদ্যোক্তাদের ভূমি মালিক হিসেবে মূল্যায়ন করে অর্থায়নকারীর মানসিকতা পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা, করপোরেট ট্যাক্স, কাস্টম ডিউটি, ভ্যাটসহ শুল্ক কমানো, সব প্রযোজ্য অগ্রিম কর এবং একটি সমন্বিত স্বয়ংক্রিয় কর ব্যবস্থাপনা রাজস্ব কাঠামো বিনিয়োগের ইকোসিস্টেম আরও সহজতর করবে বলে মন্তব্য করেন।
বিডার সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম সহজ করতে ব্যাপক সংস্কারের পাশাপাশি প্রণোদনাগুলোকে সমন্বিত করতে বিডা বেশকিছু নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করেছে। বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত গতিশীল সেবাগুলোকে এগিয়ে নিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। কিন্তু এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, তবে বেসরকারি বা সরকারিসহ যে কোনো সংস্থার সহযোগিতায় আমরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হব।
বিএসইসির সভাপতি তার বক্তব্যে বিনিয়োগকারীদের নির্দেশিকা প্রদানের জন্য সুসংহত করপোরেট গভর্ন্যান্সের গুরুত্ব তুলে ধরেন। ইস্ট কোস্ট গ্রুপের পরিচালক তানজিম চৌধুরী অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহামারির প্রভাবগুলো তুলে ধরেন।