মো. আসাদুজ্জামান নূর: বছরের প্রথম সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও পুঁজিবাজারের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখলেন বিনিয়োগকারীরা। বছর শেষের পতনের ধারা থেকে বের হয়ে সপ্তাহজুড়ে সূচক বেড়ে লেনদেন হয়েছে। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে ফিরতে শুরু করেছেন ক্ষুদ্র ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। টানা ছয় কার্যদিবস উত্থানে পুঁজিবাজারে প্রায় চার মাসের দর সংশোধনের আভাস মিলেছে। দীর্ঘ হতাশার অবসান ঘটিয়ে শেয়ারগুলো এই চার মাসে হারিয়ে ফেলা দর একটু একটু করে ফিরে পাচ্ছে।
এদিকে লেনদেনের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২১ নভেম্বরের পর গতকাল প্রথমবারের মতো লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সেদিন লেনদেন ছিল এক হাজার ৭৮৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ৩৩ কার্যদিবস পর গতকাল লেনদেন হলো এক হাজার ৬৮৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস বুধবারে লেনদেন ছিল এক হাজার ৪১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এক দিনে লেনদেন বেড়েছে ২৬৯ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
গতকালের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বিবিধ খাত। মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশই ছিল এ খাতটির। তবে ৫৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাসের বিপরীতে বেড়েছে ৪৬ শতাংশের। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জীবন বিমা খাতেও বেশি দরপতন দেখা গেছে। ৬৯ শতাংশ কোম্পানির দরপতনে লেনদেন হয়েছে ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর শেয়ারদর বেড়েছে ৩০ শতাংশ কোম্পানির।
১০ দশমিক ৭০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে জ্বালানি খাতে। তৃতীয় স্থানে থাকা খাতটির ৭৮ শতাংশ কোম্পানির দর বাড়ার বিপরীতে কমেছে মাত্র ২১ শতাংশের। পরের অবস্থানে থাকা ব্যাংক খাতে কোনো দরপতন দেখা যায়নি। ৯০ শতাংশের বেশি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। ৯ শতাংশ কোম্পানি শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল। তবে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর আট দশমিক ৮৪ শতাংশ লেনদেন করে পঞ্চম অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। এ খাতের ৩২ শতাংশ কোম্পানির দরবৃদ্ধি দেখা গেছে। এর বিপরীতে শেয়ারদর কমেছে ৬৪ শতাংশের। আর দর ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র একটি বা তিন শতাংশ কোম্পানি। এছাড়া লেনদেনে এগিয়ে ছিল বস্ত্র, প্রকৌশল, বিমা ও খাদ্য খাত।
গতকালের লেনদেন শেষে সূচক বেড়েছে ৫৭ পয়েন্ট। সূচক দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৯৮৭ পয়েন্টে। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দর সংশোধনের পর এমন টানা সূচক বৃদ্ধি আর দেখা যায়নি। এর আগে গত ৩১ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা আট দিন সূচক বেড়েছিল।
বছরের শেষ চার কর্মদিবসের তিন দিন সূচক বৃদ্ধির পর নতুন বছরের প্রথম পাঁচ কর্মদিবসেও তা অব্যাহত থাকে। এই পাঁচ দিনেই সূচক বাড়ল ২৩০ পয়েন্ট, আর ৯ দিনে বাড়ল ৩৫৭ পয়েন্ট। এর আগে গত ৩১ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা আট দিন সূচক বেড়েছিল ৩৭৮ পয়েন্ট।
তবে সূচক বাড়লেও বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমেছে। দিন শেষে বেড়েছে ১৬৪টি কোম্পানির দর, কমেছে ১৭৯টির দর এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টির।
গতকাল সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির। শেয়ারদর দুই দশমিক ৯৭ শতাংশ বাড়ার পর কোম্পানিটি সূচকে যোগ করেছে পাঁচ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। এছাড়া লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট, তিতাস গ্যাস, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল, গ্রামীণফোন, বিএটিবিসি, ডেল্টা লাইফ, পাওয়ারগ্রিড, এনআরবিসি ও ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ সূচক বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির কারণেই সূচকে যোগ হয়েছে ৩৩ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট।