নিজস্ব প্রতিবেদক: বিনিয়োগ স্থবিরতা দূরীকরণে কভিড-১৯-এর নানামুখী প্রভাব পর্যালোচনার স্বার্থে বাংলাদেশের প্রয়োজন দ্রুত নতুন নীতিমালা প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় বাণিজ্য নীতিমালা সংস্কার করা। কভিড-১৯ পরবর্তী নতুন নতুন সম্ভাবনা খুঁজে বের করা, দেশের স্বাভাবিক উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নীতি সংস্কার কার্যক্রম, ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়া থেকে নতুন নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর উদ্যোগ, সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকদের পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবায়নের সঙ্গতি রাখা, কর ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো বের করাসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়, যাতে করে কভিড-পরবর্তী সময়ে দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়।
গতকাল আলোচকরা রিসারজেন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত তৃতীয় সংলাপ ‘অনিশ্চিত সময়ে বেসরকারি বিনিয়োগ: বাংলাদেশে কভিডের প্রভাব এবং নীতিমালার প্রয়োগ’ তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। আলোচনাটি জুমের মাধ্যমে আয়োজিত হয়। রিসারজেন্ট বাংলাদেশ এমসিসিআই, ডিসিসিআই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লি., বিল্ড এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি উদ্যোগ। এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন। আসিফ ইব্রাহীম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এবং রিসারজেন্ট বাংলাদেশের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য শুভেচ্ছা বক্তব্যে কভিড-১৯ থেকে উত্তরণের জন্য, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি কভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বে শিল্প উৎপাদন খাতে যে পরিবর্তন এসেছে, বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার যাচাই এবং তাদের দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ পরিস্থিতি, সুযোগ, সংশ্লিষ্ট নীতি কাঠামো ইত্যাদি বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে জোরারোপ করেন। এ অবস্থা থেকে অর্থনৈতিক উত্তরণের জন্য বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি জানান। এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর কাস্টমস ও লজিস্টিক বিষয়গুলোর দুর্বলতাসমূহ সমাধান, বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, স্থানীয় ও বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার পরামর্শ প্রদান করেন। ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কাদের লেলে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের ওপর ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা খুঁজে বের করার ওপর জোর প্রদান করেন। গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসের আজমান বলেন, সামগ্রিক নীতি কাঠামোর সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদি কর কাঠামো ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ব্যবসায়ী মহলের নিয়মিত আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এনবিআরের আরও একজন সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল যথা ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এনবিআর ও কর কাঠামোর আধুনিকায়নের পরামর্শ প্রদান করেন। বিল্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান চীন ও ভারতের বিশাল বাজারের সুবিধা গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করেন। স্প্যানিশ চেম্বারের সভাপতি নুরিয়া লোপেজ, ফরেন চেম্বারের নির্বাহী পরিচালক নূরুল কবির, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল রাশিদুল ইসলাম অন্যদের মাঝে বক্তব্য প্রদান করেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের সঙ্গে যেসব সরকারি সংস্থাগুলো জড়িত তারা যেন আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের সার্বিক সহায়তা প্রদান করে ও কোনোরকম হয়রানি না করে সে বিষয়ে নজরদারি জোরদার করতে হবে। শুধু বিদেশি বিনিয়োগই নয়, স্থানীয় বিনিয়োগ আকর্ষণেও সম্ভব সবকিছু করতে তিনি সরকারের সহায়তা কামনা করেন।
সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি সুনির্দিষ্ট ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় কমিটির সচিব ওয়াসেকা আয়শা খান, এমপি কভিডের প্রভাব মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্নমুখী প্রকল্প ও কর্মকৌশলের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি সহজে ব্যবসা করার সূচকে উন্নতির জন্য ও বাংলাদেশের ইতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন। বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সালাউদ্দিন ইসলাম বলেন, প্রণোদনা এবং প্রতিযোগী শ্রমবাজার বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণে সাহায্য করবে। বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকার খেলাপি ঋণ হ্রাস ও কাস্টমস আইন যুগোপযোগীকরণের ক্ষেত্রে যথাযথ নীতি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিতে উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ওয়ান স্পট সার্ভিসের সুবিধা আরও সুন্দরভাবে প্রদান করা যাবে।