বিনিয়োগকারীকে বঞ্চিত করে কোম্পানির রিজার্ভ বৃদ্ধি

 

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রিজার্ভ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে বলে যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা আমাদের চিন্তিত না করে পারে না। খবরটির শিরোনাম ‘রিজার্ভ বাড়লে পরিচালকের লাভ, বঞ্চিত হন বিনিয়োগকারীরা’। সেখানে কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণপূর্বক আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৯৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের কাছে রিজার্ভ রয়েছে ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত শীর্ষে। এ খাতের তালিকাভুক্ত ২৯টি কোম্পানি সংরক্ষণ করছে আনুমানিক ২৯ হাজার কোটি টাকার রিজার্ভ। ব্যবসার প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যাংক ও বিমা খাতের রিজার্ভ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকার কথা। ফলে ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধিকে সেভাবে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, কাগজে-কলমে যতটুকু রিজার্ভ দেখানো হচ্ছে, সে পরিমাণ রিজার্ভ প্রকৃতপক্ষেই রয়েছে কি না কোম্পানিগুলোর। সেক্ষেত্রে এর ওপর নজরদারি বাড়ানো দরকার। কেননা, কোম্পানির রিজার্ভের সঙ্গে বিনিয়োগকারীর আস্থার ইতিবাচক সম্পর্ক বিদ্যমান। এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই নিতে হবে। অবশ্য কেবল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নয়, শেয়ার বিজে ছাপা প্রতিবেদন অনুযায়ী রিজার্ভের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাত। এ খাতে তালিকাভুক্ত চার কোম্পানির কাছে নাকি রয়েছে ১৮ হাজার ৮৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা খাত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। মোট ১১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার রিজার্ভ রয়েছে এ খাতের ১৯ কোম্পানির কাছে।

প্রথম কথা হলো, কোম্পানির রিজার্ভ বৃদ্ধি অবিমিশ্র আশীর্বাদ কিংবা অভিশাপ নয়। বরং শেয়ারে বিনিয়োগের পথিকৃৎ বেনজামিন গ্রাহাম মনে করেন, এক্ষেত্রে তিন ধরনের ঘটনা ঘটে সাধারণত। এক. অল্প সংখ্যক কোম্পানি রিজার্ভের অর্থের সদ্ব্যবহার করে; দুই. বেশিরভাগ কোম্পানি রিজার্ভের অপচয় ঘটায়; এবং তিন. রিজার্ভ বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে গিয়ে তথা ব্যাপক হারে রিজার্ভ বাড়তে থাকায় মূল ব্যবসার প্রতি নজর দিতে পারে না কিছু কোম্পানি। স্থানীয় রিজার্ভমুখী কোম্পানিগুলো ওই তিন ক্যাটাগরির কোনোটা না কোনোটার মধ্যে পড়বে নিঃসন্দেহে। তবে এখনও তেমন কোনো দেশি কোম্পানির কথা শোনা যায় না, যারা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে রিজার্ভ বাড়াতে পারছে। সেক্ষেত্রে তিন নম্বর বাদ দিয়ে বাকি দুই ক্যাটাগরি আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক। এখানে জোরালোভাবে বলা দরকার, মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিও কিন্তু একটা পর্যায় পর্যন্ত রিজার্ভ বাড়ানোর পর তার সমূহ বিপদ লক্ষ করে সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সেসব অভিজ্ঞতা সামনে থাকার পরও বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করে স্থানীয় বাজারে রিজার্ভ বাড়ানোর প্রবণতা বাড়লো কেন, তা বোধগম্য নয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিত হবে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা এবং একই সঙ্গে রিজার্ভ বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে কোম্পানিগুলোকে ভালোভাবে অবহিত করা। রিজার্ভ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেটি হলো ইনসাইডার ট্রেডিং। তেমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির মুষ্টিমেয় কর্মীর স্বার্থ হাসিলের নিয়ামক হিসেবে ব্যবহার করা হয় বিনিয়োগকে। তেমন কিছু ঘটে থাকলে তা হবে চলতি শেয়ারবাজারের জন্য হুমকি। লক্ষণীয়, একাধিক কোম্পানি তাদের পরিশোধিত মূলধনের কয়েকগুণ বেশি রিজার্ভ ধরে রাখছে; কয়েকটি কোম্পানির রিজার্ভ অনুমোদিত মূলধনের চেয়েও বেশি। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর রিজার্ভ বৃদ্ধির উদ্দেশ্য প্রথমে বের করা দরকার। সেখানে বিধিবহির্ভূত কোনো কর্মকাণ্ড ঘটে থাকলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শৈথিল্য দেখানো চলবে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০